সারিয়াকান্দি হতে পারে উত্তরের সম্ভাবনাময় নৌ-বন্দর

দেশের উত্তর জনপদের সম্ভানাময় শিল্পনগরী বগুড়া। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে বগুড়ার মানুষকে কিন্তু সৌভাগ্যবানও বলা যেতে পারে। করতোয়া, নাগর, বাঙ্গালী আর যমুনার মতো বড় ৪টি নদী বয়ে গেছে বগুড়ার বুকচিরে।

২০২১ সালের ১২ আগস্ট বহু প্রত্যাশিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জে সঙ্গে যমুনা নদীতে চালু হয় ফেরি সার্ভিস। ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধনের দিন যমুনা পাড়ে ঢল নেমেছিল অসংখ্য মানুষের। এতে প্রতীয়মান হয় কতটা আকাক্সিক্ষত ছিল যমুনা নদীতে চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস। এ ফেরি সার্ভিসের ফলে নৌপথ হয়ে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার দূরত্ব কমেছিল ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার। প্রত্যাশিত ছিল এটি বাস্তবায়িত হলে যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেটি বাস্তবায়নও হয়নি, যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমান পাল্টেনি। কারণ পুরোনো ইঞ্জিনের কারণে ২৩ আগস্ট ফেরিটি প্রথম দফায় বিকল হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে কারিগরি দল ইঞ্জিন সারানোর পর ৩১ আগস্ট এটি পুনরায় চালু হয়। এক মাস না যেতেই ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী নিয়ে মাঝ নদীতে আবার বিকল হয় সি-ট্রাকটি। পরে এ পথের সি-ট্রাকটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকা খরচ করে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফেরি চলাচল করলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন শস্য, শিল্পজাত পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেয়ার দূরত্ব, সময় আর অর্থ সবই হ্রাস পেত। ফেরিতে ৪৫ মিনিটে যাত্রীরা নদী পার হতে পারত। বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলার সঙ্গে বগুড়ার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হতো। নদীর নাব্য সংকটের কারণে একেবারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সম্ভাবনা জাগানো ফেরিটি। সেই সঙ্গে যেন মুখথুবড়ে পড়ে উত্তরের লাখ লাখ মানুষের নৌপথে যাতায়াতের স্বপ্ন। তবে এখানেই শেষ নয়।

সুযোগ আর সম্ভাবনা এখনও আছে। নদীর নাব্য সংকট কাটাতে পারলে আবারও হাসি ফোটানো সম্ভব যমুনাপাড়ের মানুষের। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চালু হয়েছিল বাহাদুরাবাদ রেলঘাট। শুধু দেশে নয়, এই ফেরি ঘাটের পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়েই। বাহাদুরাবাদের বিশ্বখ্যাতি এনে দিয়েছিল একমাত্র এই ফেরি ঘাটটিই। ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচল শুরু হয়। বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ওয়াগন চলাচল করত রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে। সে সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষের দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত প্রধান মাধ্যম ছিল ফেরি সার্ভিস। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর গতি পরিবর্তন হয়। ফলে নাব্য সংকট দেখা দেয়। নাব্য সংকটে ফেরি সার্ভিস তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনের যাত্রীরা এ ঘাট

পার হতো।

উত্তরের এ নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরি ঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভ্যবতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম)  প্রতিনিধিদল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এত কিছুর পরও ভাগ্য বদলাচ্ছে না উত্তর জনপদের মানুষের।

আমাদের প্রত্যাশা সব জটিলতা কাটিয়ে আবারও নতুন করে চালু হবে যমুনার এই রুটে ফেরি চলাচল। ফসল, ও শিল্প পণ্য আর উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কাঁচামাল দ্রুততম সময়ে নৌপথে ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে যাবে। আর সারিয়াকান্দি হয়ে উঠবে উত্তরের অন্যতম

নৌ-বন্দর।

মেহেদী হাসান নাঈম

শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া