সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটার প্রক্রিয়া অনুসৃত হোক

‘অত্যধিক দাম প্রাক্কলন: ১৭৯ কোটি টাকা কম ব্যয়ে ২৫০ কোচ কিনল রেলওয়ে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, সেটি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ও আশাব্যঞ্জক। খবরের তথ্য মতে, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেনা হয়েছে কোচগুলোর প্রকল্প ব্যয় কমাতে প্রস্তাব যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে এবং বেঁচে যাওয়া ঋণ ফেরত দেয়া হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবিকে।

রেলের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ২৫০টি কোচ কেনার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পটির আওতায় ২০০ মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচের দাম অনেক বেশি প্রাক্কলন করা হলেও বাস্তবে অনেক কম দামে কোচগুলো কিনেছে রেলওয়ে। ২৫০টি কোচ ছাড়াও ২টি অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট কেনা হয়েছে। এগুলো কেনায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৯৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হয়েছে ১৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের ১৩ শতাংশ। বেঁচে যাওয়া প্রায় ৬১ কোটি টাকা এডিবিকে ফেরত দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটির অত্যধিক ব্যয় নিয়ে শেয়ার বিজে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেসব প্রতিবেদনে কোচগুলো কেনায় আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশিদর প্রাক্কলনের তথ্য তুলে ধরা হয়। সে সময় রেল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করলেও এখন সাশ্রয় হওয়ায় বেঁচে যাওয়া প্রায় ৬১ কোটি টাকা এডিবিকে ফেরত দেয়ায় আমাদের প্রতিবেদনগুলোর সত্যতাই প্রমাণ হয়েছে।

প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম দামে কোচ কেনায় এটিই প্রতীয়মান বাজারদর যথাযথ পর্যবেক্ষণ ছাড়াই দর নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন আমাদের সচেতন থাকতে হবে কোনোভাবেই যেন পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনার সংঘটিত না হয়। একটি প্রকল্প পাসের আগে কত দফায় কতভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, শক্তিশালী কমিটি তা নিরীক্ষণ করেছে; এতদসত্ত্বেও কোথাও না কোথাও ঘাপলা ছিল। তাই আত্ম-মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের রেলের অবকাঠামো নির্মাণ, ক্রয়প্রক্রিয়া ও সংস্কার-রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার যে কমতি রয়েছে; সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। আমাদের রেল নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও অভিযোগের শেষ নেই। এ অবস্থায় কম ব্যয়ে কেনা ও বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত দেয়া আমাদের আশার আলো দেখায়। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত, অভিযোগ এড়িয়ে না গিয়ে ব্যবস্থা নেয়া।

রেলে কীভাবে দুর্নীতি হয়, সেটির ১০টি উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে দুই বছর আগে ১৫টি সুপারিশ করেছিল দুদক। সে সময় রেলমন্ত্রী দুর্নীতি রোধে সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কথা বলেছেন। দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নে রেল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সে বিষয়েও সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম নয়। রেলের সব ধরনের কেনাকাটা দরপত্রের মাধ্যমে করতে অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়ার কথা বলেছে দুদক। নির্দিষ্ট সময় পরপর সেটির বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করা গেলে দুর্নীতি কমবে এবং এ খাতে স্বচ্ছতা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা মনে করি।