সা ত কা হ ন:  আন্নার ফিরে আসা

একটি দৈনিক পত্রিকা আয়োজিত জাতীয় স্কুল বিতর্কের ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম। সংগত কারণে অনেক বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে গিয়ে পরিচয় হয় ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে। সুন্দর ভঙ্গিতে কথা বলে সে। নামটিও সুন্দর, আন্না কাদের মিথিলা। সবাই আদর করে ডাকে মিথি! ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের সেরা আটটি স্কুলের সমন্বয়ে বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিতর্কে সেরা দুইয়ে উঠে যায় তার টিম। সুন্দর উপস্থাপন ভঙ্গির কারণে তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগে। কথা বলি তার মায়ের সঙ্গে।
২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করে মিথি। পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে। ২০১৩ সালে সে ভর্তি হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখায়। বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে সবসময় সে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ‘বঙ্গবন্ধু মেধাবৃত্তি’ পেয়েছে দুবার। ভালোই কাটছিল মিথির শৈশব, কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২০১৭ সালে যখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া মিথি হঠাৎ থমকে যায়। শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। চিকিৎসকরা বলেন, মিথির হার্টে সমস্যা হয়েছে। এ ছোট্ট দেহে হার্টের সমস্যার সঙ্গে টাইফয়েড হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে ছোট্ট শিশুর দেহে মাত্র ১৪ দিনে ২৮টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তবে কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছিল না সে। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসায় অসুস্থ অবস্থাতেই পরীক্ষায় অংশ নেয় মিথি। স্বাভাবিকভাবেই ফল তেমন ভালো হয়নি তার। পরীক্ষার ফল প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও জ্বর নিয়ে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। তখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মাত্র ২০ দিন বাকি। সহপাঠীরা যেখানে মডেল টেস্ট দিচ্ছিল, তখন সে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতর। দেখা দেয় রক্তশূন্যতা। মিথির এক শিক্ষিকার ছেলে এসে রক্ত দেয় তাকে। শিক্ষক-সহপাঠী সবাই দেখতে আসে তাকে। কিন্তু কোনোভাবেই তার সুস্থতার লক্ষণ দেখতে না পেরে ডাক্তার তাকে ক্যানসারের পরীক্ষা দেন। রাখা হয় ওটিতে।
এদিকে শুরু হয়ে যায় তার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। বাবা-মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও অসুস্থ শরীর নিয়েই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় মিথি। এমন অসুস্থতা নিয়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা মিথিলার সমাপনী পরীক্ষার ফল ছিল জিপিএ ফাইভ! সঠিক চিকিৎসায় মিথিলা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। বরাবরের মতো শ্রেণিকক্ষ ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রেখে চলেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিথিলা বলে, আমার মা আমার অনুপ্রেরণা। একই সঙ্গে বাবা, শিক্ষক ও সহপাঠীদের ভালোবাসায় আমি ফিরে পেয়েছি নতুন প্রাণ। পড়ালেখা করে আমি অনেক বড় হতে চাই। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।

আশিকুর রহমান