মো. আসাদুজ্জামান নূর: গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ার এক দিন পর দেখা গেল উল্টো চিত্র। আশাবাদী হয়ে বিনিয়োগে ফিরেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গতকাল আবার পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা; যার ফলাফল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের বড় পতন। আগের দিন এক শতাংশের বেশি সূচক বেড়ে সাত হাজার অতিক্রম করেছিল ১০ কার্যদিবস পর। গতকাল প্রায় সমান পরিমাণ হারিয়ে সূচকের অবস্থান সাত হাজারের নিচে চলে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি। বিষয়টি হতাশাগ্রস্ত করেছে বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে বিনিয়োগবিমুখ হয়েছেন তারা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল বাজারে ক্রেতাদের চেয়ে বিক্রেতারা বেশি সক্রিয় ছিলেন। একমাত্র পাট খাত ছাড়া সব খাতের শেয়ারের দাম কমেছে। বিক্রয় চাপের প্রভাবে সূচক কমার সঙ্গে কমেছে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের দর। গতকাল যতগুলো শেয়ারের দর বেড়েছে, তার বিপরীতে কমেছে দ্বিগুণেরও বেশি।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেনে অংশ নিয়ে শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে ২৫৭টি কোম্পানির। এর বিপরীতে দর বেড়েছে ৯৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ২০টি কোম্পানির শেয়ারের। পতনের দিন বাজারে দাপট দেখা গেছে লোকসানি ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির। বিপরীতে বড় মূলধনির বেশিরভাগ মৌলভিত্তির কোম্পানি দর হারিয়েছে।
গতকাল সকালে লেনদেনের শুরুতে সূচক পড়ে যায় ৪০ পয়েন্টের বেশি। বেলা সোয়া ১১টায় সূচক অবস্থান ফিরে পেলেও এর পর থেকে কেবল পড়েছে। শেষ এক ঘণ্টায় পতনের গতি ছিল আরও বেশি। শেষ পর্যন্ত সূচক কমে ৯৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট।
সূচকের পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার চার দশমিক ৩৫ শতাংশ দাম কমায় সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ১০ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওয়ালটন, যার কারণে সূচক কমেছে আট পয়েন্ট। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি, বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, ওষুধ ও রসায়ন খাতের বেক্সিমকো ও স্কয়ার ফার্মা, বিদ্যুৎ খাতের ইউনাইটেড পাওয়ার, ব্যাংক খাতের ব্র্যাক ও টেলিকমিউনিকেশনসের গ্রামীণ ফোনের দরপতনও সূচকের অবনমনে রেখেছে প্রধান ভূমিকা। এ ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক পড়েছে ৪৬ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ১৫২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৩৩১ কোটি চার লাখ টাকার। লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাতের অবদান গতকাল দাঁড়ায় ১৮ শতাংশের বেশি, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ২২ শতাংশের মতো। গতকাল এ খাতের ২৮টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে মাত্র দুটি করে কোম্পানির শেয়াদর বেড়েছে ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাত গতকাল দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। মঙ্গলবার এ খাতের অবদান ১৩ শতাংশের বেশি থাকলেও গতকাল সেটি কমে দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতাংশে। ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পায়। এর বিপরীতে দর বেড়েছে ১১টি কোম্পানির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির শেয়ারের।
আগের কার্যদিবসে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিবিধ খাত লেনদেনের তৃতীয় অবস্থানে ছিল। বুধবার এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১০ শতাংশের বেশি। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। গতকাল এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা গেছে। আটটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে চারটির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির।
চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। ৩৯টি কোম্পানির শেয়াদর হ্রাসের দিনে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ৯ শতাংশের বেশি। আগের দিনে এটি ছিল ১১ শতাংশের বেশি। গতকাল এ খাতের ১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে ও তিনটির অপরিবর্তিত ছিল।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ পাঁচে ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। আগের কার্যদিবসে ১১ শতাংশের কাছাকাছি অবদান রাখা এ খাতের অবদান বুধবারে দাঁড়ায় আট শতাংশের বেশি। এছাড়া গতকাল প্রকৌশল, বিমা এবং খাদ্য ও জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। ফলে এ খাতগুলোয়ও মোটামুটি লেনদেন হয়েছে। গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ছয় হাজার ৫৯২ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৬২১ ও ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যায়।