এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : প্রকৃতি অপরূপ লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সাজে সাজিয়ে তুলেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল রাঙ্গাদিয়া সড়ক। লাল কৃষ্ণচূড়ার সুবাস ও সৌন্দর্যের মুখরিত দর্শনার্থীদের নতুন আকর্ষণ এখন এই সিইউএফএল সড়ক। আনোয়ারা ছাড়াও নগর-বন্দর পেরিয়ে একটি সেলফির জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছে শত শত ছবি ও ভ্রমণপিপাসুরা। মূলত সন্ধ্যা হলেই এটি সেলফি সড়কে পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় সারকারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সড়কের পৌনে এক কিলোমিটার জুড়ে একপাশে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রেমে মজেছে ছোট-বড় সবাই। রোদের আলো পড়লেই জ্বল-জ্বল করে উঠছে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচূড়া গাছে যেন আগুন লেগেছে! বিকাল নামলে দূর-দূরান্ত থেকে আসতে থাকে প্রকৃতিপ্রেমীরা। কেউ কেউ বিকালের সময় কাটাতে আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। আবার এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে গাড়ি থামিয়ে এ সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সন্ধ্যা হলেই সব শ্রেণির ভ্রমণপিপাসুরা মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজি (অটোরিকশা) করে আসে এবং লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তারা সেলফি তোলে।
আমরা জানি বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় এসেছে। শোভাবর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রাম-বাংলার পাশাপাশি এখনও তার নড়বড়ে অস্তিত্ব নিয়ে কোনোক্রমে টিকে আছে জনপথের পথে-প্রান্তরে।
জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাস্কার। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এই ফুল যেন এখন বাঙালির ঐতিহ্যেরই একটা অংশ হয়ে গেছে সবার অজান্তেই। এদেশে এসে পরিচিত হয়েছে নতুন নামে। অনেকেই মনে করেন, রাধা ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এই ফুলের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর সবচেয়ে বড় খ্যাতি হচ্ছে মোহনীয় রক্তিম আভা। সবুজের বুক চিরে বের হয়ে আসা লাল ফুল এতটাই মোহনীয় যে, পথচারীরাও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হোন। প্রকৃতিকে রক্তিমতায় মাতিয়ে রাখা এই বৃক্ষের উচ্চতা তেমন একটা বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠলেও তার শাখা-প্রশাখা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত থাকে। গ্রীষ্মজুড়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখলেও অন্যান্য সময়গুলোয় এই বৃক্ষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না, অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় বাকিটা সময়। এপ্রিলে গ্রীষ্মের শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতির সবুজ পেছনে ফেলে বেরিয়ে আসতে থাকে লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল। মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে থাকে তার সৌন্দর্যের রূপ। তখন আর আলাদা করে তার খোঁজ নেয়ার দরকার হয় না।
রিসিতা শৈবাল নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সিইউএফএল সড়কের লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সৌন্দর্য সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। নিজের চোখে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সৌন্দর্য দেখতে এলাম। খুব সুন্দর একটা স্থান। দারুণ একটা সময় কাটায় ভালোই লাগছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা নিশি কবির নামের এক দর্শনার্থী বলেন, কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিইউএফএল সড়কের কৃষ্ণচূড়া গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি দেখেছি। ফেসবুকে দেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে ছুটে আসা। সত্যি অসাধারণ! দেখে মন জুড়িয়ে গেল। সবাই অনেক খুশিও হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী জারা শাহরিয়ার সেতু বলেন, লোকমুখে শুনে এখানে এসেছি কৃষ্ণচূড়ার ফুল দেখতে। আসলে শহরেও এরকম কৃষ্ণচূড়া দেখা হয় না। এসে ফুল দেখে খুব ভালো লাগছে। হালকা বাতাসের ঢেউয়ে ফুলগুলো নড়ছে। এতে পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি একটি বাণিজ্যিক সড়কপথ। মানুষের যাতায়াত ও শ্রমিকদের কাজের মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করতে তারা এই গাছগুলো রোপণ করেছে। এছাড়া সড়কের গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব পালন করে থাকে।