Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 8:48 pm

সিএমএসএফ তহবিলের আইনি কাঠামো নিয়ে কাজ হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত মুনাফা নিয়ে গঠিত ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) সময়ের দাবি ছিল বলে জানিয়ে তহবিলটির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, তহবিলের আইনি কাঠামো এখন পর্যন্ত যেভাবে চলছে তাতে কোনো অংশীজন বাধা দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঘনিষ্ঠভাবে আইনি বিষয় নিয়ে নিয়মিত বসছেন, আলাপ-আলোচনা করছেন।

কোথাও কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঠিক করে নেবে। আইনের বিভিন্ন দিকগুলো আরও পুনবির্বেচনা করার প্রয়োজন হলে বিএসইসি তা করবে বলেও জানান তিনি।

গতকাল রোববার পুঁজিবাজার-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নিজস্ব কার্যালয় পল্টনে আয়োজিত ‘সিএমজেএফ-টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় দীর্ঘদিন দাবিহীন পড়ে থাকা লভ্যাংশ নিয়ে ২০২১ সালে গঠন করা হয় সিএমএসএফ। এ তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তহবিলটি বাংলাদেশে নতুন জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি। যত সময় যাবে তহবিল পরিচালনার নীতিমালা তত পরিশীলিত হবে, উন্নয়ন হবে। এটি একটি আবর্তনশীল প্রক্রিয়া।’

তহবিল পরিচালনায় স্বচ্ছতা রাখতে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তহবিল পরিচালনায় নিত্যনতুন ধারণা পেতে অংশীজনদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিএমএসএফ গঠন করার পরপর তফসিলি ব্যাংকের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড তহবিলটিতে দেয়ার বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সিএমএসএফের আইনি কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ওই সময়ে।

‘দ্য নেগোশিয়েবল ইন্সট্র–মেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১’ বা সমঝোতামূলক আইনের আওতায় ব্যাংক কোম্পানি ডিভিডেন্ড বিতরণের ঘোষণা দেয়ার পর ওই অর্থ বিনিয়োগকারী ছাড়া অন্য কাউকে দেয়ার সুযোগ নেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ আপত্তি এখনও সুরাহা হয়নি। বিষয়টিতে কোনো অগ্রগতি রয়েছে কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে নজিবুর রহমান বলেন, ‘এখন যে আইনি কাঠমো রয়েছে, তা নিয়ে বাধা দিচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঘনিষ্ঠভাবে আইনি বিষয় নিয়ে নিয়মিত বসছেন, আলাপ-আলোচনা করছে।’

তহবিল গঠনের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন বড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছিল বলে জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। আমরা সবার আস্থা অর্জন করতে পেরেছি সময়োচিত এ প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর।’

তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সিএমএসএফ আয় করছে। এই অর্থের ভাগ বিনিয়োগকারীরা পাবেন কি না, এ নিয়ে জানতে চাইলে নজিবুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে নীতিমালা আছে, সে অনুযায়ী তা পাবে না। অংশীজনরা যদি এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেন বা কোনো সিদ্ধান্ত আসেন, তখন তা মানা হবে।’

যারা ডিভিডেন্ড জমা দেয়নি তাদের আড়াই শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে বলে জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির নীরিক্ষা কার্যক্রম চালাবে বিএসইসি। নীরিক্ষা শেষে ডিডিভেন্ড জমা না দেয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে না দেয়া মোট ডিভিডেন্ডের ওপর জরিমানা আরোপ করা হবে।

তহবিল গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭০ বিনিয়োগকারীকে অবণ্টিত মুনাফা বুঝিয়ে দিয়েছে সিএমএসএফ। এ তথ্য জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, এর মধ্যে নগদ অর্থ পেয়েছেন প্রায় ৮০০ জন এবং শেয়ার পেয়েছেন ৩৭০ জন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক এ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সিএমএসএফের তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ২৭০ কোটি টাকায়, এর মধ্যে নগদ আকার ৫৬০ কোটি টাকার। আর রাইট শেয়ার ও শেয়ায়ের বাজারমূল্য ৭১০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য যথাযথভাবে দিয়েছে কি না, সেটা যাচাইয়ে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কোম্পানিকে আমরা অডিট করব। আগামী ৩০ জুনের পর যদি কেউ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেয়, তাদের জরিমানা করা হবে।

সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপটির সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।