নিজস্ব প্রতিবেদক: সমাপ্ত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে ব্যাংকের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় কমেছে, অঙ্কে যার পরিমাণ ৬৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলো এ খাতে ব্যয় করেছে ৪৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় করেছে সাত কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল দেশের ৫৯টি ব্যাংক। ব্যয়ের ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিল দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। সিএসআর খাতে ব্যয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ এক শতাংশেরও কম। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর ব্যয় ছিল নামমাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সিএসআর খাতে ব্যয় হওয়া ৪৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৪৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ এক শতাংশেরও অনেক কম, তারা ব্যয় করেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ বা চার কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর ব্যয় ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা মোট ব্যয়ের দুই দশমিক ৩৬ শতাংশ। নামমাত্র ব্যয় করেছে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক, মাত্র ১৫ হাজার টাকা।
ব্যাংকগুলো সবচেয়ে ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে। এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ২৬৭ কোটি ৪৭ লাখ বা মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রধানত শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং কভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ খাতে ব্যয় করা হয়। এর বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোর নানা শাখা অফিস, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি সংস্থার মাধ্যমে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ ও কভিড-১৯-এ দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এরপরে রয়েছে স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে মোট ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ব্যাংক, যা মোট ব্যয়ের ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সারাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা, চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই সরবরাহ, কভিড-আক্রান্ত মানুষের দ্রুত চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়, কভিড-১৯ প্রতিরোধে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত ডিভাইস, টেস্টিং কিটস প্রভৃতি) ক্রয়, চিকিৎসা সহায়তা প্রভৃতি খাতে ব্যাংকগুলো এ ব্যয় করেছে।
ব্যাংকগুলো তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে মোট ৪৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা মোট ব্যয়ের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ব্যয় করেছে। এ খাতের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকগুলো প্রধানত নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিতে ব্যয় করেছে। তাছাড়া নানা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নেও ব্যয় করেছে।
সংস্কৃতিতে সাত কোটি ৭৮ লাখ বা এক দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা বা শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে ব্যাংকগুলো। অন্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ১১ লাখ টাকা বা মোট ব্যয়ের আট দশমিক ৯০ শতাংশ। এ খাতে রয়েছে পেশাজীবীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই সরবরাহ, কভিড-আক্রান্ত মানুষের দ্রুত চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়, টেস্টিং কিটস প্রভৃতি ক্রয়, হাসপাতাল বা ক্লিনিক নির্মাণ, ব্যক্তিপর্যায়ে দরিদ্র বা অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া প্রভৃতি।
অন্যদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করেছে সাত কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তারা সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে। তাদের ব্যয় ছিল তিন কোটি ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ব্যয়ের ৪১ দশমিক ২৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে তিন কোটি দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা বা মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ ৬৯ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শিক্ষাখাতে ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অন্য খাতে ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, সংস্কৃতিতে ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও পরিবেশে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা সিএসআরে ব্যয় করেছে তারা।