মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ

সিকিউরিটিজ হাউস মার্চেন্ট ব্যাংক পরিদর্শনে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) আওতাধীন সাতটি ব্রোকারেজ হাউস এবং একটি মার্চেন্ট ব্যাংকে পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের আটটি পৃথক পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত পরিদর্শন কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

যেসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হবে, সেগুলো হলোÑরয়েল ক্যাপিটাল লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-২১), পিএইচপি স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-২৩৫), এমটিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-১৯৭), পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-২৪৭), স্টক অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-১৯৯), পূরবী সিকিউরিটিজ লিমিটেড (সিএসই ট্রেক নম্বর-৮৭) এবং আল-মুনতাহা ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-৪৯)। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক হিসেবে রয়েছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

বিএসইসি জানিয়েছে, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী, পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত দায়-দায়িত্ব পরিপালন, তদারকি, পুনর্মূল্যায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে এএমএল/সিএফটি (অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং/কাউন্টার-টেরোরিজম ফাইন্যান্সিং) সিস্টেম চেক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসইসি মনোনীত পরিদর্শন কর্মকর্তাদের তালিকা এরই মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে।

রয়েল ক্যাপিটাল লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভীন ও ডিএসই’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. রাজু আহমেদ। পিএইচপি স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান ও মো. মাহমুদুল হাসান।

এমটিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও ডিএসইর ডেপুটি ম্যানেজার মো. আল আমিন। পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও ডিএসইর ডেপুটি ম্যানেজার মো. আল আমিন।
স্টক অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মিঠুন চন্দ্র নাথ ও ডিএসইর এক্সিকিউটিভ জামশেদুল ইসলাম। পূরবী সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান ও আমিরুল ইসলাম।

আল-মুনতাহা ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হানাস ও ডিএসইর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. রাজু আহমদে। লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভিন ও মো. আশরাফুল হাসান।

বিএসইসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ জুনভিত্তিক এএমএল/সিএফটি সিস্টেম চেকের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) ঘাটতি, মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ অ্যাকাউন্টে ঋণ প্রদান, ডিলার অ্যাকাউন্ট, প্রভিশনস বা মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল, প্রভিশনসের ঘাটতি, অননুমোদিত লেনদেনসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদ মূল্যসহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হবে।

ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরিদর্শন কার্যক্রমের বিষয়ে এরই মধ্যে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় হিসাববহি, রেকর্ডপত্র, দলিলপত্র প্রভৃতি পরিদর্শন কমিটির চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সিকিউরিটিজ আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না, তা নিশ্চিত করতেই এই পরিদর্শন কার্যক্রম রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে কোনো ধরনের অসংগতি বা অনিয়ম পাওয়া গেলে কমিশন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

বিএসইসি আশা করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত দায়-দায়িত্ব পরিপালন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও জোরদার হবে এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হবে।