নাজমুল হুসাইন: জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের ওপরের অংশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। তারা সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এক বৈঠকে সতর্কবাণী নিচের অংশে বহাল রাখার কথা জানিয়েছেন। তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সিগারেটের প্যাকেটে উপরিভাগে অন্যূন ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী ছাপানোসংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তিটি আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবে এনবিআর।
এনবিআর সূত্র জানায়, গত ১০ আগস্ট এনবিআরের (মূসক নীতি) অফিস কক্ষে এক সভার পরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। ওই সভায় আবারও ব্যান্ড রোল বা স্ট্যাম্পের দোহাই দিয়ে প্যাকেটের নি¤œভাগে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ এক বছরের জন্য পুনর্বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শিগগিরই সেই সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে এনবিআর।
প্রসঙ্গত, সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেট, কার্টন বা কৌটার উপরিভাগের অন্যূন ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ ছাড়া কোনো তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি ও বাজারজাত করা যাবে না। এনটিসিসির প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুয়ায়ী এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৯ সেপ্টেম্ব^র থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আগের প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিটিও বাতিল করা হয়েছে ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
জানা গেছে, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এর ১০ ধারা অনুযায়ী সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের ওপরের অংশে ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) হস্তক্ষেপে আইন মন্ত্রণালয় তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের নি¤œভাগে ৫০ শতাংশ স্থানজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের সাময়িক অনুমতি প্রদান করলে এনটিসিসি ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ এ-সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল।
এতে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো আইন মন্ত্রণালয়ের এই মতামতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। বেসরকারি সংস্থা উবিনিগ, প্রজ্ঞা এবং প্রত্যাশা এ-সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন করলে ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণসংক্রান্ত ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরবর্তী আদেশ প্রদানের জন্য ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
পরবর্তী সময়ে এনটিসিসি এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তামাকবিরোধী প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাশ বাংলাদেশ’ (অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ বাংলাদেশ) চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরও একটি রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট আগের সব কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বহাল রাখার আদেশ দেন। তবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও রিট আবেদনের দাবির সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি, তথ্য-প্রমাণ উপস্থিত করতে না পারায় এ বছরের ১৯ মার্চ ‘অ্যাশ বাংলাদেশ’-এর রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উপরিভাগে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণসংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে সব বাধা অপসারিত হয়।
সমন্বিত তামাকবিরোধী জোটের দাবি, আইনের নানা ফাঁক ও তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপে দেশে তামাকবিরোধী নানা উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি পাঠিয়ে আবারও ব্যান্ড রোল বা স্ট্যাম্পের দোহাই দিয়ে আইনের প্রয়োগে বাধা তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে সমন্বিত তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়ক ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। ফলে নির্দেশনা প্রতিপালনের বিকল্প নেই। আর এনবিআরের উচিত হবে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এমন অনৈতিক অনুরোধ জানানো। জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আমরা এনটিসিসির গণবিজ্ঞপ্তির প্রতিফলন দেখতে চাই।’