সিগারেটে এমআরপি বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব ফাঁকি কমবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সব সবচেয়ে বড় বাধা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। তামাক কোম্পানি যেহেতু এমআরপির চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে বিপুল অবৈধ মুনাফা অর্জন করে, সেহেতু তারা দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করে। কিন্তু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সে পথ বন্ধ করা হলে তামাক কোম্পানিই মূল্য বৃদ্ধির কথা বলবে। বিপুল অবৈধ মুনাফা অর্জন বন্ধ করা হলে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির আগ্রাসী আচরণ, অবৈধ হস্তক্ষেপ, আইন লঙ্ঘন প্রবৃতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে রাজস্ব ফাঁকি কমবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের কলা ভবনে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিইআরের কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা

ইয়াসমিন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিইআরের ফোকাল পারসন অধ্যাপক ড. রুমানা হক। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সিনিয়র কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের (বাটা) সমন্বয়কারী সাইফুদ্দীন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্র্যান্ট ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষেজ্ঞ সুশান্ত সিনহা।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, এবারের বাজেট প্রস্তাবে সিগারেটের চারটি স্তরেই মূল্য ও করহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিগারেট ও বিড়ির কাগজের ওপর আমদানি শুল্ক ৭ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মূল্য কাক্সিক্ষত পরিমাণ না বাড়লেও মধ্যম, উচ্চ ও অতি-উচ্চ স্তরে সিগারেটের কর হার বেড়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। একই সঙ্গে সব সিগারেটের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, প্রতি খুচরা শলাকা খুচরা পয়সার ঝামেলা মুক্ত হয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ একক শলাকার মূল্যে খুচরা পয়সা থাকলে বিক্রেতারা খুচরা অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করে। এতে তামাক ব্যবহারকারীরা বেশি দামে কিনলেও বর্ধিত মূল্য থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, কিন্তু ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি পায়।

তারা আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে আরও কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে। মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিবেচনায় নির্ধারিত মাত্রার ক্যাফেইনযুক্ত কার্বনেটেড বেভারেজের ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আর ভিন্নতর মাত্রার উপাদান সংবলিত কার্বনেটেড বেভারেজের সম্পূরক শুল্কহার ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সুইটেনড বেভারেজের টার্নওভার কর, উৎপাদিত জুসের মূল্য সংযোজন কর এবং আইসক্রিমের ওপর কর হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি চর্চার পেছনের চিন্তাটি সুন্দর আগামীর ইঙ্গিত দেয়।

সভায় ১৩টি সুপারিশ করা হয়েছে, সুপারিশগুলো হলোÑসব তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য যৌক্তিক পরিমাণ বৃদ্ধি; নিম্নস্তরে সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ ৬৩ শতাংশ নির্ধারণ; সিগারেটের স্তরসমূহ এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনা; সিগারেটের স্তরসমূহ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে একটিতে নিয়ে আসা; তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতির প্রচলন; সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা; জোরদার মনিটরিংয়ের জন্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা; মনিটরিংয়ের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন; সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রির নিয়ম অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা; কর প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও দক্ষ করে তোলা; তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের অংশীদারত্ব প্রত্যাহার করা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি গ্রহণ এবং কার্বনেটেড বেভারেজ, সুইটেনড বেভারেজ, অ্যালকোহলসহ সব স্বাস্থ্যহানিকর খাদ্য ও পানীয়ের ওপর উচ্চ হারে করারোপ।

সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত কর্মী উপস্থিত ছিলেন।