Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 9:43 pm

সিগারেট কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকির অপকৌশল বন্ধ হোক

‘সিগারেট থেকে দৈনিক রাজস্ব হারাচ্ছে ১৩.৬৮ কোটি টাকা: খুচরা আর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যর ফাঁকে রাজস্ব ফাঁকি’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কেড়েছে বলেই ধারণা। খবরে জানা যায়, নি¤œস্তরে ভোক্তা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কোটি ও মাসে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি ও মাসে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সিগারেট বিক্রিতে রাজস্ব পায় না সরকার। মূসক আইন ও বিধিতে ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’ লেখা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলো এসআরওতে কেবল ‘বিক্রয় মূল্য বা খুচরা মূল্য’ লিখিয়ে নিয়েছে।

ভোক্তাদের কাছ পণ্য বিক্রি করে যে রাজস্ব পায়, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয়। তা যদি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না হয়; তা হলে তা ভোগ করছে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী। আবার ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’ মুদ্রিত না থাকায় ভোক্তাদের বেশি দামে সিগারেট কিনতে হচ্ছে। দুই দফা কী পরিমাণ রাজস্ব থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে, তা হিসাব করাও কঠিন। 

রাজস্ব ফাঁকি রোধে এসআরও সংশোধন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ‘সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে’Ñএমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি বাজার পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে এলটিইউ। এতে অভিযোগের সত্যতা পায় এলটিইউ। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি এলটিইউ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মতবিনিময় সভা করে।

বিএটিবি জানিয়েছে, প্যাকেটের গায়ে মুদ্রিত মূল্য হলো খুচরা বিক্রেতার ক্রয় মূল্য। অথচ পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা, ২০২১-এর সংশিষ্ট বিধি অনুসারে মোড়কজাত পণ্যের মোড়কের গায়ে ‘সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য’ মুদ্রিত থাকতে হবে এবং সেটিই হচ্ছে ভোক্তা মূল্য। 

এ বিধি সিগারেট কোম্পানিগুলো মানছে না। বাজারে ১০ পয়সা, ২০ পয়সার মুদ্রা প্রচলিত নেই। এমনকি ২৫, ৫০ পয়সা মুদ্রাও সুলভ নয়। এসআরও অনুযায়ী, অতি উচ্চস্তরের এক শলাকা সিগারেটের মূল্য ১৪ টাকা ২০ পয়সা, উচ্চস্তরের এক শলাকা সিগারেটের মূল্য ১১ টাকা ১০ পয়সা, মধ্যমস্তরের এক শলাকা সিগারেটের মূল্য ৬ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ খুচরা শলাকা কেনার ক্ষেত্রে বিনিময় মূল্য প্রদান করতে না পারার অজুহাতে খুচরা বিক্রেতা অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার সুযোগ পান। এতে প্রতীয়মান হয়, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারি অফিসের যোগসাজশ রয়েছে। অন্য সব  পণ্যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) মুদ্রিত থাকে। বিষয়টি অনেক আগেই তামাকবিরোধী ব্যক্তি-সংগঠনগুলো সামনে এনেছে। তা সত্ত্বেও বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। এখন এলটিইউ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে সিগারেট-সংক্রান্ত এসআরও সংশোধন করে ‘বিক্রয় মূল্য বা খুচরা মূল্য’ শব্দসমূহের পরিবর্তে ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করার অনুরোধ জানিয়েছে এলটিইউ। তথ্য-উপাত্ত যাচাই ও পর্যালোচনা করে এনবিআর কার্যকর ব্যবস্থা নিলে রাজস্ব ফাঁকিতে সিগারেট কোম্পানির অপকৌশল বন্ধ হবে বলে আমরা মনে করি।