নিজস্ব প্রতিবেদক:সরকারের ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাম্বাসাডর নিয়োগ, রেস্টুরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ তৈরিসহ নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর এ অপচেষ্টা রুখতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি আইনকে শক্তিশালী করা জরুরি।
রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের মেঘনা হলে গতকাল মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ: জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রধান অন্তরায় ‘তামাক’। দেশ থেকে তামাক সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্যকে রক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধূমপানের স্থান বিলুপ্ত, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ এবং খুচরা শলাকা সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম। মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ১০ জন সদস্য। তারা হলেনÑ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, ওবায়দুল মুকতাদির, পঙ্কজ দেবনাথ, অসীম কুমার উকিল, রানা মোহাম্মদ সোহেল, তামান্না নুসরাত বুবলী, জিন্নাতুল বাকিয়া, সুলতানা নাদিরা ও উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মানসের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান তালুকদার।
দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, মানুষের আচরণ পরিবর্তন হলে অনেক রোগ, মৃত্যু কমানো সম্ভব। দেশে মানুষ প্রতিদিন সিগারেটের পেছনে ১০৭৭ ও বিড়ির পেছনে ৩৭৭ টাকা ব্যয় করে। তামাক থেকে সরকারি কোষাগারে যা আয় হয়, তার চেয়ে বেশি অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকের কারণে মৃত্যুবরণ করে। তামাক সেবন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালকে টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ লক্ষ্যে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধনীর বিরোধিতা করছে। আমাদের দেশে তরুণদের সংখ্যা বেশি। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে গোপনে ই-সিগারেট প্রমোট, রেস্টুরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ তৈরি এবং বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। নাটক, সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের হার বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। বিক্রয়স্থলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাত্র দুটি কোম্পানি সারাদেশে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে আইনভঙ্গ করছে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যাতে শক্তিশালী না হয়, ট্যাক্স যাতে সঠিকভাবে আরোপ না হয় তার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে লবিং শুরু হয়েছে। বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী চলছে। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত; তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সিএসআর কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; খুচরা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা; মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার ৯০ শতাংশ করার প্রস্তাবনা এসেছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এ সংসদে গেলে যাতে পাস হয়।
ডা. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়েরা কিশোর বয়সে ধূমপান দিয়ে শুরু করে মাদকে ধাবিত হয়ে অজস্র বাবা-মায়ের স্বপ্ন নষ্ট করছে। তামাক ও মাদকের মতো ক্ষতিকর নেশার কুফলগুলো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্বের দোহাই দিয়ে দেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, তামাকের রাজস্বের চাইতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে বেশি ব্যয় হয় তামাকের কারণে।
মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাতের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক।