Print Date & Time : 14 August 2025 Thursday 6:17 pm

সিগারেট খাতে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে সব পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যে বিক্রি হলেও সিগারেট ও বিড়ির ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করছে না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা মূল্যে বিক্রেতাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছে আর বিক্রেতারা তার চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রেতাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছেন। সর্বত্র প্যাকেটের গায়ে উল্লিখিত সর্বোচ্চ দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রয় মূল্যের ওপর কর আদায় সম্ভব হলে চলতি অর্থবছরেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো। আর এভাবে বছরের পর বছর তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

‘তামাকজাত দ্রব্যের (সিগারেট ও বিড়ি) খুচরা ও পাইকারি বিক্রয় মূল্যে জাতীয় বাজেটে মূল্য ও কর পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে একটি সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর (বিইআর) সম্মেলন কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিইআর ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করে। গবেষণার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।

গবেষণার ফল উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৭০ টাকা হলেও বিক্রি করা হয় গড়ে ২৯৪ টাকা ২৯ পয়সায়। উচ্চ স্তরের সিগারেট ২০৪ টাকার পরিবর্তে গড়ে প্রায় ২২৯ টাকা ৮৮ পয়সায়, মধ্যম স্তরের সিগারেট ১২৬ টাকার পরিবর্তে ১৩৫ টাকা ৮৬ পয়সায় এবং নি¤œ স্তরের সিগারেট ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৯৫ টাকা ১৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। বিড়ির ক্ষেত্রেও এভাবে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এভাবে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট-বিড়ি বিক্রি অব্যাহত থাকায় প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

পাইকারি দোকানেও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট ও বিড়ি বিক্রি হয় বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রকাশিত গবেষণাটি মূলত পরিমাণগত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বিভাগীয় শহরসহ আরও ২টি জেলা শহর মিলে মোট ১২টি শহর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শহর থেকে চারটি করে মোট ৪৮টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংজ্ঞায়িত পাবলিক প্লেসের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এ তথ্য নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উল্লিখিত ১২টি শহর থেকে দুটি করে মোট ২৪টি পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্য নেয়া হয়েছে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এবং ফাঁকি বন্ধ করতে অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দ্রব্যের বাজার ও বিক্রয় পর্যবেক্ষণে এবং কর আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে; সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো পর্যায়ক্রমে এক স্তরে নিয়ে আসতে হবে; সিগারেট ও বিড়ির খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; এ ছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সামগ্রিক সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেনÑজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, ভাইটাল স্ট্যাটেজিসের প্রোগ্রাম হেড মো. শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, দ্য ইউনিয়নের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট মো. হামিদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, সিটিএফকের প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আব্দুল্লাহ। এ ছাড়াও দেশে কর্মরত তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা গবেষণার ওপর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।