সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবনে আরও দুজনের মরদেহ পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান গতকাল বিকালে বলেন, ‘ভবনের বেজমেন্টে দুই পুরুষের মৃতদেহ পেয়েছেন আমাদের উদ্ধারকর্মীরা। দুটোই উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

গত মঙ্গলবার ওই বিস্ফোরণের পর রাতে মোট ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। স্বজনরা মোট তিনজনের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনকে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভেতরে আর কারও মৃতদেহ আছে কি না, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’

মঙ্গলবার বিকালে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাততলা ওই ভবনে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হলো, যাদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা বুঝে পেয়েছেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত মোট ৬৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। যারা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের অবস্থাও ভালো নয়।

এদিকে ভবনটি কবে তৈরি, সরকারের নিয়মকানুন মেনে বানানো হয়েছে কি নাÑএসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন পরিচালক। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, শবে বরাতের ছুটি শেষে অফিস খুললে সব দেখে বলতে পারবেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানা গেলেও তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না। তার ভাষ্য, ভবনটি তৈরি হয় চার দশক আগে। শুরুতে ছিল তিনতলা। পরে তা আরও চারতলা বাড়ানো হয়। যার হাত ধরে ভবনটি তৈরি হয়, তিনি মারা গেছেন এক দশক হলো। এখন তার ছেলেদের মালিকানায় রয়েছে ভবনটি।

এ ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আমাদের এখানে ১১ রোগী ছিলেন, তার মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেলে ট্রান্সফার করা হয়েছে, কারণ তার বার্ন নেই। যে ১০ জন আছেন তার মধ্যে তিনজন আইসিইউতে ও দুজন লাইফ সাপোর্টে আছেন। আর বাকিরা আছেন এসডিইউতে।

চিকিৎসাধীন ১০ জনের মধ্যে কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক বলেন, যারা আছেন তাদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। কারণ কারও শরীরের ৮০ পারসেন্ট, কারও ৯০ পারসেন্ট, কারও ৫০ পারসেন্ট দগ্ধ হয়েছে। সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আমরা কাউকেই শঙ্কামুক্ত বলতে পারব না।

এদিকে ভবনের একটি দোকানের মালিক আব্দুল মোতালেব মিন্টুসহ বেশ কয়েকজনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মিন্টু বিস্ফোরিত ভবনের বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা কাউকে আটক করিনি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা বাড়ির মালিক ও দোকান মালিকদের ডেকেছি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলছি।

এছাড়া ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে সেফটিক ট্যাংক কিংবা গ্যাস লিকেজ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সেসব বিষয় তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ঢাকা শহরে সুয়ারেজ ও গ্যাস লাইন এবং অনেক পুরোনো বিল্ডিং রয়েছে। এগুলোর কী অবস্থা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ জানানো হবে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান বলেছেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি, এটা নিশ্চিত হয়েছি। আমাদের র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এখানে উপস্থিত আছে। তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং রাজউকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) উপ-পরিচালক এবং মিডিয়া প্রধান রিয়াজুল হক বলেছেন, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী শিল্প সচিব ও বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালকের নির্দেশে একটি প্রতিনিধিদল সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভবনটির নিচতলায় জমে থাকা চার বোতল পানি বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। আমরা এটি পরীক্ষা করে দেখব, এই পানির সঙ্গে কোনো বিস্ফোরক উপাদান আছে কি না। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল জানানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।