অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে কামারপল্লিগুলোয় পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে কামারপল্লি এখন লোহা ও হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। কামারশিল্পের কারিগরের হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে দা, বঁটি, চাকু, কুড়াল, ছুরি, চাপাতিসহ ধারাল সব যন্ত্রপাতি।
পবিত্র ঈদুল আজাহার (কোরবানি) ঈদকে সামনে রেখে জেলার সদর, কাজিপুর, কামারখন্দ, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার হাটবাজারেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারপল্লির কারিগররা।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, সারাবছর কাজ সীমিত থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময়টায় বেড়ে যায় তাদের কর্মব্যস্ততা। ঈদকে ঘিরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে কামারশিল্পে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন কামাররা। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা।
কামারশিল্পীরা বলেন, প্রতিটি কাটারি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়, দা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, কেজি হিসেবে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, ছোট ছুরি ১২০ থেকে ২৫০ টাকায় এবং বড় ছুরি এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। এছাড়া বঁটি প্রতিটি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামারপল্লির কারিগররা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতাদের বলেই ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। পশু জবাই করার বড় ছুড়িগুলো এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। চাপাতিগুলো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতাদের দাবি, এ বছর পশু কোরবানির উপকরণের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে কয়লা ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় সরঞ্জামের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
উপজেলার ব্রজবালা গ্রামের স্বপন কামার বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় চাপ বেশি থাকায় রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে তাদের। নতুন সরঞ্জামের চাহিদার পাশাপাশি পুরোনোগুলোয় শান দেয়া হচ্ছে। তবে এ বছর বেশিরভাগ ক্রেতা পুরোনো সরঞ্জাম মেরামত করতে নিয়ে আসছেন। বিক্রি একটু কম হচ্ছে।
উপজেলার তালগাছি বাজারের গোবিন্দ কামার বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছি। আমার পূর্বপুরুষরাও এই কাজ করতেন। এখন সারাবছর তেমন কোনো কাজ থাকে না। তবে কোরবানির ঈদের আগে কাজের চাপ বেশি থাকে। খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না, ঈদের দু-এক দিন আগে বিক্রি বাড়বে।
আবু তালেব নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আর কয়েক দিন বাকি। তাই আগে থেকেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের জন্য নতুন ছুরি কিনে রাখছি। আরেক ক্রেতা আব্দুল মাজেদ মাস্টার বলেন, ‘পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি পুরোনোগুলোয় শান দিতে নিয়ে এসেছি। আগেই কিনে রাখা হচ্ছে।’