অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে সূর্যমুখী ফুলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। কারণ গত কয়েক বছরে সুর্যমূখী ফুল চাষে সাফল্য পেয়েছেন এ জেলার চাষিরা। এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
কৃসি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৬ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সুর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ৯টি উপজেলার ১২০ জন কৃষক সরকারি ভাবে বীজ ও সার পাওয়ায় চাষাবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার সুর্যমুখী চাষের ২৭৫ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করেছেন। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম হওয়ায় সূর্য্যমুখী তেলের চাহিদাও ভালো। এতে সূর্যমুখী চাষাবাদে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
সরকারী ভাবে বীজ ও সার পেয়ে জেলা সদরে ৩, কাজীপুর ৬, রায়গঞ্জ ১, উল্লাপাড়া ৫, শাহজাদপুরে ৩, কামারখন্দে ১.৫, বেলকুচিতে ৫, তাড়াশ ২ ও সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চৌহালীর চরাঞ্চলে ১০ হেক্টর জমিতে সুর্যমুখী চাষ হচ্ছে। এতে মোট ৩৬ হাজার ৫শত জমিতে চাষ হয়েছে।
জানা যায়, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী লাভজনক ফসল বলছে কৃষক। সূর্যমুখী চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষকেরা অনেক খুশি। মাত্র ১’শ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফলন ভালো ও তুলনা মূলক লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এই চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষক। বর্তমানে ফুল অবস্থায় রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিপক্ক হবে। কৃষকরা নিজেরা ভোজ্য তেল তৈরি করে প্রয়োজনীয় তেলের চাহিদা পূরণ করে বাইরে সরবরাহ করতে পারবে। ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা তাদের।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের রমজান আলী বলেন, ‘গত বছর অন্যের কাছ থেকে সূর্যমুখী ফুলে বীজ নিয়ে অল্প পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলাম। এতে অনেক লাভবান হয়েছি। তাই চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল।
চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের কৃষক আফছার আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে সুর্যমুখীর আবাদ করেছি। ফলন ভালো দেখছি। ব্যবসা ভালো হলে আগামীতে চাষের মাত্রা বাড়িয়ে দেবো।’
একই গ্রামের আরেক ফুল চাষি হাসমত জানান, সূর্যমূখী একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদে সময় ও খরচ দুটোই কম লাগে। জমিতে স্বল্প চাষে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সূর্যমুখীর গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামিনুর রহমান শামীম বলেন, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমূখীর তেল মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। চলতি মৌসুমে জেলায় ৯টি উপজেলার ৩৬ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে সুর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীর চাষ লাভজনক। এবার সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
সূর্যমুখী আবাদ করার জন্য কৃষকদের প্রতিনিয়তই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, আবহাওয়া ভালো থাকলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করা করছেন কৃষি বিভাগ।