Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 12:31 am

সিরাজগঞ্জে যমুনায় ফের ভাঙন

শরীফ আহমদ ইন্না, সিরাজগঞ্জ: গত কয়েক দিনে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলায় যমুনার ভাঙনে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এ ভাঙনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদীর পাড়ে অবস্থিত অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে।

গত কয়েক দিনে কাজিপুর উপজেলার নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাইরে মাছুয়াকান্দি, উত্তর রেহাইগুড়িবেড় ও বিলসুন্দর চরের মালেক, রুস্তম, রফিকুলসহ দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, পাঁচটি দোকান ও নাটুয়াপাড়া নৌঘাটের যাত্রীছাউনি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ফসলি জমি, সবজিক্ষেত ও গাছের বাগান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে শুরু হয় যমুনা নদীর ভাঙন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার তারাকান্দি, শুভগাছা, টেংলাহাটা, নাটুয়াপাড়া, খাসরাজবাড়ী, কান্তনগর, বাংলাবাজার, খাসশুড়িবেড়, গোয়ালবাথান, হাটগাছা, জগৎগঞ্জ, ভাঙ্গারছেও, আমনমিহার, বিলসুন্দর, শ্রীপুর, বাদুয়ার পাড়া, ধুলাউড়ি, মানিকপোটল, পলাশপুর, চরনাটিপাড়া, পানাগাড়ি, যুক্তিগাছা, দাদবোড়া, উজান মেওয়াখোলা, বিলধলী, রাজবাড়ী, পীরগাছা, ডগলাস ভেটুয়া, তেকালী, ডিগ্রি দোরতা, সাউদটোল, ফুলজোড়, মেঘাই, পলাশপুর, ঘোড়াগাছাসহ অনেক জনপথ কাজিপুরবাসীর কাছে এখন অতীত। গত কয়েকদিনের ভাঙনে চৌহালী উপজেলার বিরবাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাসদেলদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশত পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বিরবাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, স্কুল বারবার নদীতে ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ফলে দিন দিন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। অতি শিগগিরই স্কুলটি স্থানান্তর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলের দাবি, স্কুলগুলো দ্রুত স্থায়ী জায়গায় স্থানান্তর করলে বাড়বে শিক্ষার মান, কমবে ভোগান্তি।

নাটুয়াপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য বেলাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রতিদিনই ঘরবাড়ি যমুনা গ্রাস করছে। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

নাটুয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান চান জানান, যমুনার ভাঙনের ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে চরের অসহায় মানুষ। ভাঙনের কারণে কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি এখন চরাঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। বাকি ছয়টি ইউনিয়নও ভাঙনের মুখে পড়েছে। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের তেমন ব্যবস্থা নেই। ১৯৮০ সালের ভয়াবহ ভাঙনে কাজিপুর থানা (মূল থানা), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসসহ নানা স্থাপনা যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। এভাবেই যমুনা প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা। বিপন্ন হচ্ছে জনপথ। কমে আসছে ফসলি জমি। নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। বদলে যাচ্ছে জীবন-জীবিকার ধরন।

চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর আবদুল্লাহ আল মামুন (অব.) জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চৌহালী রক্ষায় সাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বাঁধে একাধিকবার ধস নামে। কিছুতেই যমুনা নদীর ভাঙন থেকে চৌহালীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন ভাঙনের শিকার হচ্ছেন চৌহালীবাসী। আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে।