Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 11:33 am

সিরাজুল আলম খানের শেষ শ্রদ্ধায় খেদ, প্রাপ্য সম্মান পাননি তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খানের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ রাজনীতির অঙ্গনে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তরা।

গতকাল শনিবার ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজার আগে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে জাসদসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও অংশ নেন।

গত শতকের ষাটের দশকে আওয়ামী লীগে যুক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ভেঙে জাসদ গড়ার কারিগর ছিলেন। নেপথ্যে থাকা এই ব্যক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে দেখা হয়।

দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকা সিরাজুল আলম খান ৮২ বছর বয়সে গত শুক্রবার মারা যান।

গতকাল সকাল পৌনে ৯টায় তার কফিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে আনার পর সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা লাইন ধরে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১০টায় জানাজা হয়। এরপর প্রয়াত নেতার কফিন অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা হয় তার জš§স্থান নোয়াখালীর উদ্দেশে।

পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।

সিরাজুল আলমের রাজনৈতিক সহকর্মীরা মনে করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক হিসেবে প্রাপ্য সম্মান পাননি তিনি।

ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সিরাজুল আলম খানের অবদান আইয়–ব সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামÑসেটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি ও পটভূমি রচনায় তার যে অবদান, সেটা জাতির ইতিহাসে চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতপার্থক্য হয়েছে, কিন্তু তার এই অবদান সেটা জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃতি দিল না… আমি মনে করি, এটা একটা অপরাধ, জাতির পক্ষ থেকে একটা অপরাধ করা হলো।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জাতির এই সূর্যসন্তানকে জাতির পক্ষ থেকে, জনগণের পক্ষ থেকে যে সম্মান জানানো উচিত ছিল, আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার সেই সম্মান তাকে জানাতে পারেনি। সিরাজুল আলম খানের এই প্রয়াণে আজকে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশ ও সিরাজুল আলম খান এক ও অবিচ্ছেদ্য। দেশের স্বার্থের বাইরে তার নিজের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ ছিল না।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সিরাজুল আলম খানকে সম্মান জানালে রাষ্ট্র ছোট হতো না, রাষ্ট্রের কোনো ক্ষয় হতো না। আজকে দেখেন, জানাজায় সরকারি দলের একজন মানুষও নেই। অথচ সরকারি দলের বাঘা বাঘা কয়েকজন নেতার নাম বলা যাবে এখন জীবিত, তাদের বয়স বেশি হয়েছে বটে, তবে আসতে পারতেন এই জানাজায়।’

জাসদের একসময়কার নেতা মান্না বলেন, ‘ইতিহাস বলবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার যে অবদান, এগুলো অস্বীকার করা যাবে না। সত্যি কথা হচ্ছে, সিরাজুল আলম খান না থাকলে এই স্বাধীনতা কীভাবে বিকশিত হতো, কীভাবে আসত, এটা নিয়ে অনেক গবেষণার ব্যাপার আছে। তাকে সম্মান না দিয়ে ছোট হয়েছে সরকার, তাদের সংকীর্ণ মন-মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তার বিশিষ্ট ভূমিকাকে রাষ্ট্রের যেভাবে স্বীকৃতি দেয়ার দরকার ছিল, রাষ্ট্র সেটা দেয়নি। এটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা বলে আমি মনে করি।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে তার মতো একজন কিংবদন্তি রাজনীতিক যথাযোগ্য মর্যাদা হয়তো পাননি এ কারণেই যে, তিনি স্বাধীনতার পরেই বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।’