সিলেটে বন্যায় পানিবন্দি ১৫ লাখ মানুষ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বৃষ্টি না হলেও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট নগরীতে আরও দুই ইঞ্চি পানি বেড়েছে। এছাড়া জেলার আট উপজেলায়ও বন্যার পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব বন্যাদুর্গত মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন।

নগরের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় নগরের ১৫টি স্কুলসহ ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনও খাদ্য সংকটে রয়েছেন। নগরের সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের মসজিদে মাইকিং করে বাসার জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় চলে যেতে বলা হয়।

সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আমার ওয়ার্ড। এখানকার প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকাই পানির নিচে। এ ওয়ার্ডে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন থেকে মাত্র ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ৭০০ প্যাকেট বিতরণ করেছি। তাজ বলেন, এখানে চার হাজার প্যাকেট খাবার প্রয়োজন, যা পেয়েছি তা খুবই কম। আমাদের চাহিদার কথা সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইয়িদ চৌধুরী জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টি কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় জেলাজুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেয়া আছে। বন্যাকবলিতদের জন্য তৃতীয় দফায় ১০০ টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ১২৯ টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার দেয়া হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় প্রথম দফায় ১০৯ টন চাল এবং এক হাজার প্যাকেট খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনও তা বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে বন্যার পানিতে বিদ্যুতের সাবস্টেশন তলিয়ে যাওয়া এবং বাসা-বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিটারে পানি ওঠায় সিলেট নগরীতে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার বিদুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, দক্ষিণ সুরমা, উপশহরসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফলে এসব এলাকায় মঙ্গলবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হতে থাকায় খুব শিগগিরই এসব এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিদুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত নগরীর ৫০ হাজারের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।