সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ব্যয় সংগ্রহের পরিকল্পনা: মেক্সিকোর পণ্যে ২০% কর আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের খরচ জোগাতে মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ করারোপের পরিকল্পনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার একথা জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট।

মেক্সিকো সঙ্গে সঙ্গে এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য মেক্সিকান পণ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে এবং এতে করে শেষ পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণের খরচের বোঝা মূলত তাদের ঘাড়েই চাপবে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনিয়া নিয়েতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে নির্ধারিত বৈঠক বাতিলের ঘোষণার পরপরই হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কর আরোপের কথা জনান।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে এটি একটি বড় অর্থনৈতিক প্রস্তাব হতে পারে।’ তবে এ প্রস্তাব পাস হলে তা ভোক্তা, উৎপাদক ও  মেক্সিকোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও তিনি স্বীকার করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ করারোপ করা হলে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করা যাবে, যা মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের জন্য যথেষ্ট।’

ট্রাম্পের করারোপের এ প্রস্তাব মাত্র একটি বিকল্প পন্থা এবং এটি এখনও প্রারম্ভিক পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ রেন্স প্রেইবাস বলেন, ‘অনেক বিকল্প পথের মধ্যে করারোপের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে মেক্সিকো। তাদের পণ্যের ওপর করারোপ হলে এর প্রভাব পড়বে গোটা দেশেই। সাধারণ মেক্সিকানরাও পণ্যের ওপর এই শুল্কারোপ মেনে নেবেন না।

মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস ভাইডিগ্যার করারোপ পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘পণ্যের ওপর করারোপ করে মেক্সিকোকে দেয়ালের খরচ দেওয়াতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র; বরং এতে করে উত্তর আমেরিকার ভোক্তারাই বেশি খরচের মধ্যে পড়বে।

সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ খরচ জোগাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে  মেক্সিকো আলোচনা করবে না বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্পের গৃহীত ব্যবস্থা মেক্সিকোর জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে পুরনো অসন্তোষ জাগিয়ে তুলেছে। মেক্সিকো তার গোটা ইতিহাসে ধনী ও শক্তিধর প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছে বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোয় সামরিক অনুপ্রবেশ চালিয়েছে এবং দেশটির উল্লেখযোগ্য ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। কিন্তু মেক্সিকোর কয়েক প্রজšে§র নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলার চেষ্টা করে এসেছেন এবং অতীতের বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেক্সিকো থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে উদ্যোগ নিতে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য বন্দিশিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের মতে, এ দেয়াল নির্মাণে ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। এর পুরোটাই মেক্সিকো সরকারকে বহন করতে হবে।

নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের খরচ মেক্সিকো থেকে নেওয়ার কথা বলে আসছেন ট্রাম্প।

বুধবার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ট্রাম্প বলেছেন, মেক্সিকোকে ‘অবশ্যই’ দেয়াল নির্মাণের ‘শতভাগ খরচ’ বহন করতে হবে।

এর জবাবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট পেনিয়া নিয়েতো স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ট্রাম্পের দেয়ালের জন্য মেক্সিকো কোনো খরচ দেবে না।

এর পরই ট্রাম্প বলেন, খরচ না দিতে চাইলে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করা। ট্রাম্পের এ বক্তব্যের পরই তার সঙ্গে আগামী সপ্তাহের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট।

এর সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য বন্দিশিবিরের জায়গা বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নানা শহরে অবৈধ অভিবাসীদের সহায়তায় যে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, তাও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প বলছেন, সব অপরাধী, মাদক চোরাকারবারি আর গ্যাং মেম্বারদের যুক্তরাষ্ট্রের মাটিছাড়া করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে দেশটির ক্ষতি করার সময় ফুরিয়ে এসেছে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি অনেকগুলো বিষয়ে ১০০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন। তার মধ্যে মেক্সিকো থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে সীমান্তে দুই হাজার মাইল লম্বা একটি দেয়াল তৈরি ছিল অন্যতম। ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই একটির পর একটি আদেশে সই করে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটির মতো মেক্সিকান বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর বাস। প্রতিবছর কাজ বা ভালো জীবনের খোঁজে নতুন করে হাজার হাজার মেক্সিকান অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। এটি সব সময়ই মার্কিন রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেন রথ বলছেন, এ সিদ্ধান্ত কিছু মানুষের কষ্টই শুধু বাড়াবে। রথ বলছেন, নিরাপত্তার কথা বলে তিনি শরণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করতে চান।

তিনি বলেন, ‘এটি নিষ্ঠুর ও অর্থহীন সিদ্ধান্তের একটি নমুনা।’