ড. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা: ই-কমার্সের ক্রমবিকাশ: ই-কমার্স বলতে অনলাইনে বেচা-কেনাকে বোঝানো হয়। ই-কমার্সের কার্যক্রমের ধরন অনুযায়ী ই-কমার্স বলতে শুধু অনলাইনে পণ্য বা সেবার কেনাবেচাকে বোঝায় না, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসা করা হয় তাকেও বোঝায়। সুতরাং যে কোনো পণ্য বা সেবা, যা অনলাইনে বিক্রয়যোগ্য, তা কোনো একটি ওয়েবসাইটে বিবরণসহ ছবি বা ভিডিওতে দেখানোর মাধ্যমে বিক্রয় করাকে ই-কমার্স বলে। ১৯৮১ সালে (Thomson Holidays) ইউকে ইনস্টল করে প্রথম বিজনেস-টু-বিজনেস অনলাইন শপিংয়ের সঙ্গে পরিচিত করান। ১৯৮২ সালে মিনিটেল নামে ফ্রেঞ্চ টেলিকম কোম্পানি প্রথমবারের মতো অনলাইন অর্ডার নেয়। ইংরেজ বিজ্ঞানী টিম বার্নারস লি ১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ থেকে ই-কমার্স বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়। ১৯৯২ সালে ‘বুকস ডট কম’ প্রথম ই-কমার্স অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং ব্যবহার করে। ১৯৯৫ সালে ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন ডট কম, ডেল ও সিসকো চালু হয়। দীর্ঘ আট বছর পর ২০০৩ সালে আমাজন ডট কম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং প্রথম বার্ষিক প্রফিট ঘোষণা করে। ১৯৯৬ সালে ভারতে দীনেশ আগর ওয়াল ইন্ডিয়ামার্টের মাধ্যমে বি-টু-বি ই-কমার্স চালু করে। ১৯৯৯ সালে চীনের ‘আলিবাবা ডট কম’ এবং বাংলাদেশে ‘মুন্সিজি ডট কম’-এর নামে ই-কমার্স ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০১ সালে আলিবাবা ডট কম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বাংলা ভাষায় তৈরি দেশের প্রথম ই-কমার্স ও ডিল ওয়েবসাইট হলো এখনই ডটকম। ২০১৪ সালে ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অনলাইন ব্যবসায় গতি লাভ করে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রথম স্থানটি এরই মধ্যে চীনের ‘আলিবাবা ডট কম’ দখলে নিয়েছে শতভাগ দারাজ কিনে নেয়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দারাজ। বাংলাদেশে ই-কমার্স বাড়ছে খুবই দ্রুত গতিতে, ফলে বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনও। কারণ এই খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় শতভাগ, যা প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব ধরনের পণ্যই এখন বাংলাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে কেনা-বেচা হয়ে থাকে। তবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ই-কমার্স এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। অনলাইনে অর্ডার দেয়া গেলেও এখনও নগদ অর্থেই কেনাকাটা বেশি হয়, যা ক্যাশ অন ডেলিভারি নামে পরিচিত। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ২৪ মিলিয়ন ই-কমার্স স্টোর রয়েছে।
ই-কমার্সের বাণিজ্যিক পদ্ধতি: বিশ শতকের শেষ ভাগে উন্নত দেশগুলোয় ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হলে ই-কমার্স সেক্টর ২০০০ সালের গোড়ার দিকে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন ব্যবসার অনুমতি প্রদান করে এবং ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দেয়। ফলে ই-কমার্স প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফেসবুকে দুই হাজারের বেশি সাইট এবং ৫০ হাজারের বেশি ই-কমার্স পেজ রয়েছে। জার্মানির গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্তার মতে, ২০১৯ সালে ই-কমার্সের ব্যবসার পরিমাণ এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২৩ সালে তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়। আমাদের দেশের ব্যবসায়িক লেনদেন প্রায় ৮০ শতাংশের মতো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে ই-কমার্সের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তা হলো-(১) ব্যবসা থেকে ব্যবসা (B2B): যখন অনলাইনে ব্যবসা থেকে ব্যবসা অথবা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবার লেনদেন হয়, তখন তাকে ব্যবসা থেকে ব্যবসা (B2B) বলে। (২) ব্যবসা থেকে ভোক্তা (B2C): গ্রাহক কর্তৃক অনলাইনে আবেদনকৃত পণ্য বা সেবা যখন কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সেই গ্রাহক বা ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী পৌঁছে দেয়, তখন তাকে ব্যবসা থেকে ভোক্তা (B2C) বলে। (৩) ব্যবসা থেকে সরকার (B2G): অনলাইন বাণিজ্য বা লেনদেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি খাতের মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় ক্রয়-বিক্রয়, লাইসেন্স-সংক্রান্ত লেনদেন, আয়কর, ভ্যাট, বিভিন্ন ধরনের শুল্ক আদায় এবং অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে। (৪) ভোক্তা থেকে ভোক্তা (C2C): ভোক্তা থেকে ভোক্তা অথবা গ্রাহক থেকে গ্রাহক। একাধিক ব্যক্তি ও গ্রাহকের মধ্যে যখন কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেন সম্পাদিত হয়, তখন তাকে গ্রাহক থেকে গ্রাহক (C2C) বলে। সাধারণত ইলেকট্রনিক বা অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ধরনের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়ে থাকে। (৫) গ্রাহক থেকে সরকার (C2G): ডিজিটাল যুগে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে ফি বা কর নিয়ে থাকে। ডিজিটাল গভর্ন্যান্সের আওতায় এ ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রধান মাধ্যম হলো অনলাইন-ভিত্তিক সেবা প্রদান।
২০০৬ সালে আইসিটি আইন ই-কমার্স প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স দারাজ গ্রুপকে চীনের আলিবাবা গ্রুপ অধিগ্রহণ করে ২০১৮ সালে। বাংলাদেশে ২০২০ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শতভাগ মালিকানায় কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়। ধারাবাহিকভাবে ই-কমার্স শিল্প ২৫ শতাংশের অধিক এবং নগদ লেনদেন ২০ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ই-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করেছে নতুন ধারা, কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে তরুণ প্রজম্মের জন্য, নতুন উদ্যোক্তাদের যুক্ত করেছে ই-কমার্সের সঙ্গে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতারণা ও জালিয়াতি প্রতিরোধে করণীয়: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পর ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না। লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক রেযামন্দির ভিত্তিতে।’ সূরা-নিসা: ২৯। ই-কমার্সের পুঁজি হচ্ছে মানুষের আস্থা অর্জন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, আস্থা অর্জন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪ জুলাই ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১’ জারি করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা বাস্তবায়নের জন্য চালু করেছে এসক্রো (Escrow) পদ্ধতি। দীর্ঘ সময় পর দেশের ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত ২৮ অক্টোবর দুই মাসের মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সেবা প্রদানের মাধ্যমেই আমাজান, আলিবাবা, ফ্লিপকার্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যখন সারাবিশ্বে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক সেই সময় আমাদের দেশের মানুষ একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তাই আস্থা অর্জনের জন্য সততা, ন্যায়নীতি এবং নৈতিক গুণাবলি অর্জন করতে হলে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবাসায়িক কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। মাকাসিদ আশ-শারিয়াহ্ আলোকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হলে তথ্য গোপন, ধোঁকা, জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের কোনো সুযোগ থাকবে না। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধে ইসলামিক ব্যাংকিং পদ্ধতির বিষয়টি সামনে আনতে পারি।
ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতির মূল বিষয় হলো জনগণের আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন এবং সামাজিক কল্যাণ সাধন। সব কার্যক্রম শরিয়াহ্ নীতি অনুসরণ করে হচ্ছে কি না, তা দেখাশোনা করার জন্য শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। ফলে এখানে প্রতারণা বা জালিয়াতির সুযোগ কম। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসলামি ব্যাংকের মূল পার্থক্য হলো ইসলামিক ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়, অংশীদারি ও ইজারার মাধ্যমে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে। অপরদিকে ই-কমার্স শব্দটি মূলত Physical Products and Future Services -গুলোকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করানোকে বোঝায়। অপরদিকে ইসলামিক ব্যাংক ও ই-কমার্সের সঙ্গে মিল হলো তারা উভয়েই Products and Future Services -এর ব্যবসা করে, যা শরিয়াহ্ অনুমোদন করে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতিতে, যা ইসলামি ব্যাংকের বাই মুরাবাহা পদ্ধতির অনুরূপ। কিন্ত যখন কিছুসংখ্যক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তখন আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক আইন তা প্রতিরোধ করতে পুরোপুরি সক্ষম হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যদি নৈতিকতার গুণাবলি সৃষ্টি না হয়, তাহলে শুধু আইনের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা অনেক সময় সম্ভব নাও হতে পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সঠিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য সাধারণ আইনের পাশাপাশি তদারকির জন্য শরিয়াহ্ সুপারভাইজারি কমিটি থাকা অপরিহার্য। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আধুনিক বিশ্বে বড় বড় অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি সাধিত হয়নি। ব্যবসায়িক জগতে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। কারণ এখানে গ্রাহকের চাহিদামতো উপযুক্ত দামে মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রাপ্তির পর পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়। সুতরাং সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের মাকাসিদ-আশ-শরিয়াহ্র আলোকে আইনি কাঠামো তৈরি করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সময়ের দাবি।
লেখক: কর্মকর্তা, ইসলামি ব্যাংকিং বিভাগ, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড
সূত্র:
০১. E-Commerce of Bangladesh in the next five years: What to expect? The Daily Star, Published in 28 October 2021
০২. E-commerce in Bangladesh: Where are we headed? Financial Express Published in January 10, 2020
০৩. মো. জিল্লুর রহমান ‘বাংলাদেশে ই-কমার্সের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শেয়ার বিজ নিউজ, প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
০৪. উইকিপিডিয়া
০৫. বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
০৬. বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট, ৬ জুলাই, ২০২১
০৭. দারাজ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক, যুগান্তর ১২ জুলাই, ২০২১
০৮. অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি ই-কমার্স, সময়ের আলো, প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২১
০৯. ই-কমার্স এবং বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা, রূপসী বাংলা, প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল, ২০২১
১০. বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১’ ৪ জুলাই, ২০২১