সুচিত্রা সেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

 

শাহীন রহমান, পাবনা: আজ ১৭ জানুয়ারি, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের এইদিনে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পর পাবনায় অবৈধ দখলে থাকা তার স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটা উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকে বাড়িটি অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। বাড়িটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে। বাড়ির আঙিনায় ঘাস আর ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে ফাটল। প্রায় আড়াই বছরেও উদ্ধারকৃত বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ’ গড়ে তোলায় অগ্রগতি নেই। সব মিলিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জেলার সাংস্কৃতিকর্মীরা।

তিনি শুধু পাবনার মেয়ে নন, অভিনয় গুণে হয়ে উঠেছিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের মহানায়িকা। তিনি সবার প্রিয় রমা সেন, চলচ্চিত্রে যার নাম সুচিত্রা সেন। যার শৈশব-কৈশোরের একটি অংশ কেটেছে পাবনার হেমসাগর লেনের পৈতৃক বাড়িতে। যে বাড়ির প্রতি কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে সুচিত্রা সেনের ছোটাছুটির দিনগুলো। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তার মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করা হয় সুচিত্রা সেনের এ পৈতৃক ভিটা। উদ্ধারের পর বাড়িটির প্রধান ফটকে দুটি তালা ঝুলিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা বাড়িটিতে মাদকাসক্তদের আনাগোনা দেখা গেছে। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনাজুড়ে এখন বড় বড় ঘাস, লতাপাতা, বাড়ির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তরা, নষ্ট হচ্ছে দরজা-জানালা। নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

নোংরা পরিবেশ আর বাড়ির ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জেলার সংস্কৃতিকর্মী স্বাধীন মজুমদার, হিউম্যান কার্ডিয়া হিয়া ও আনিকা তাসনিম বলেন, উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসন শুধু বাড়িটিতে দুটি তালা ঝুলিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ির আঙিনায় বড় বড় ঘাস-লতাপাতায় ভরে গেছে। চারদিকে ঝোপ-জঙ্গলে নোংরা পরিবেশ দেখে হতাশ হতে হয়। এ বাড়ি উদ্ধারে এত আন্দোলন ও সফলতা সেই বাড়ির

এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। বাড়িটি দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করা প্রয়োজন।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনার সাধারণ সম্পাদক ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ করার জন্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা শিল্পকলা একাডেমি থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক দিন আগে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয় নয়। দিন দিন বাড়ির অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। জরুরিভাবে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো এ বিষয়ে জানান, সুচিত্রা সেনের বাড়িতে একটি স্মৃতি সংগ্রহশালা করার প্রস্তাবনা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি টিম বাড়িটি পরিদর্শন ও তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে সুচিত্রা সেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাবনা প্রেস ক্লাবে স্মরণসভা ও ‘মেঘকালো’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ।