সুদব্যয় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিন

দেশের বাজেট বাস্তবায়নে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণগ্রহণ অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর বাংলাদেশ বিগত কয়েক দশকে বেশ কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে দেশটি ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক নি¤œ আয় থেকে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের বিষয়ে প্রথম পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হয়। বিগত এক দশকে দেশের মাথাপিছু আয় বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে উচ্চসুদের ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রকারান্তরে সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাজেটের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বাজেট ২০২৩-২৪: সুদ পরিশোধে ব্যয় সাত বছরেই তিনগুণ!’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে যেসব প্রক্ষেপণ নির্ধারণ করে, তার বেশিরভাগই অর্জিত হয় না। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা কোনো অর্থবছরেই অর্জন করা সম্ভব হয় না। সামষ্টিক অর্থনীতির আরও বেশকিছু সূচকে অর্জনের এ ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয়ের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে প্রতিবছর যে প্রক্ষেপণ করা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন হচ্ছে সুদ পরিশোধের জন্য।

এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশ বহু বছর আগেই তলাবিহীন ঝুঁড়ির তকমা থেকে মুক্তি লাভ করেছে। দ্রুততার সঙ্গে সামনের দিকে অগ্রগরও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি ঋণ গ্রহণে সচেতন না হওয়া হয়, তাহলে সুদ পরিশোধের ব্যয় বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে বাজেটের সবচেয়ে বড় ব্যয়ের খাতে পরিণত হয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। আগামী অর্থবছর ঋণের সুদ পরিশোধেই এক লাখ কোটি টাকার ওপর ব্যয় হবে বলে প্রতিবেদনটির সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যয় চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের তুলনায় ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর কোনো খাতে এক লাফে এত বেশি পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধি হয়তো ঘটবে না। কাজেই ঋণ গ্রহণে সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করি।

এ কথা সত্য যে, বড় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঋণের দরকার হয়। কিন্তু ঋণ নিয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেগুলো থেকে যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন না আসে, তাহলে ওই প্রকল্পে নেয়া ঋণ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও সেটি থেকে রিটার্ন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ হতে পারে; যা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের বোঝা বাড়াবে। অবিবেচকের মতো ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এরই মধ্যে শ্রীলংকা বড় ধরনের আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। আর কোনো দেশের পরিস্থিতি তেমনটি হওয়াটা কাম্য নয়। আর সুদের পেছনেই যদি বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায়, তাহলে জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা হ্রাস পায়। কাজেই সুদের চাপ যাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সে জন্য যাচাই-বাছাই করে ঋণ গ্রহণ করা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।