সুদহার কমাতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড নীতি সুদহার কমাতে প্রস্তুত। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফেডের বৈঠক রয়েছে। সেখানে তারা নীতি সুদহার কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা গত শুক্রবার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর: সিএনএন ও রয়টার্স।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা বলেছেন, শ্রমবাজারের যে পরিস্থিতি তাতে এখন নীতিগত পরিবর্তন আনা না হলে পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসে ফেড অন্তত ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট সুদ কমাবে। এরপর শ্রমবাজারের পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে বছরের শেষে আরও বড় হারে নীতি সুদ কমানো হতে পারে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তেলের দাম বেড়ে যায়। এতে বাড়ে মূল্যস্ফীতির হার। মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ বাড়াতে শুরু করে। দফায় দফায় নীতি সুদ বাড়ানোর কারণে একপর্যায়ে তা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তবে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর ফেড আর নীতি সুদ বাড়ায়নি। ২০২০ সালে মহামারির সময় অর্থনীতিকে প্রণোদনা দিতে ফেডারেল রিজার্ভ বিপুল পরিমাণ ট্রেজারি বন্ড কিনেছিল। দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালে তারা ট্রেজারি বন্ড ছেড়ে দিতে শুরু করে।

তবে গত মে মাসে নীতি সুদহার আপাতত কমাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বলে খবর প্রকাশিত হয়। ফেড তখন জানায়, সুদহার কমানোর পরিবেশ তৈরিতে তেমন একটা উন্নতি না হওয়ায় নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হবে। মে মাসে ফেডের নীতি সুদহার দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। গত বছরের জুলাই থেকে নীতি সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে নীতি সুদহার কমানো হবে, এমন খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় ফেড আপাতত সুদহার কমানোর পথে হাঁটবে না বলে জানায় ফেড।

এখন ফেডের নীতিপ্রণেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা নিছক মূল্যস্ফীতিতে নজর দিচ্ছেন না। বরং কর্মসংস্থানের গতি কমে আসায় তারা এখন শ্রমবাজারে প্রণোদনা দেয়ার চিন্তাও করছেন। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস মনে করেন, এখন কঠোর নীতি থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় ফেডের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, কয়েক দফায় সুদ কমানো হবে বলে তিনি মনে করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ভিত্তিতে তিনি মনে করেন, এটা প্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে যখন মূল্যস্ফীতির হার অনেকটা বেড়ে যায়, তখন তিনি অনেক বেশি হারে নীতি সুদ বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিলেন। এখন যখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, তিনি ঠিক একইভাবে নীতি সুদ কমানোর পক্ষপাতী।

জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচক বা পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার (পিসিই) বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এর আগের সাম জুনে এই সূচক বেড়েছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। জুলাইয়ে পণ্যের দাম ছিল অপরিবর্তিত। গত মাসে এ নিয়ে মূল্য বেড়েছে টানা তিন মাস।
আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান কমেছে। গত মাসে ১ লাখ ৪২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, সে মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গত দুই মাসে কর্মসংস্থানের হার প্রাথমিক ধারণার চেয়ে কম ছিল। তবে গত মাসে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে; আগের মাস জুলাইয়ে যা ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নাগরিকরা মনে করছেন, গত বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দাভাব বিরাজ করছে।

ক্যাপশন: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নীতি সুদহার কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছে
ছবি: রয়টা