প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ: নগর উন্নয়ন ও সুনামগঞ্জ জেলা সদরের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পৌর শহরের সার্বিক মান উন্নয়ন জরুরি। এমন মতামতকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ স্থাপনের দাবিতে নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার(২১ জানুয়ারি) রাত্র শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারের(পাবলিক লাইব্রেরি) মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শহরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। জেলা সদরে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের দাবিতে এই নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমানায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবির) স্থান নির্ধারণের কথা বলা হলেও মূলত এটি শান্তিগঞ্জেই হয়েছে। দুই উপজেলার সীমানায় ডেকার হাওরের মত একটি বড় হাওরের জীববৈচিত্র বিপন্ন করে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই দুইশ একর জমির প্রায় সবটুকুই শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের উজানীগাঁও এলাকায় পড়েছে। বক্তারা আরো উল্লেখ করেন, গেল ১৫ বছরে যত উন্নয়ন হয়েছে, সবই হয়েছে জয়কলস ইউনিয়নে। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হওয়া এসব উন্নয়নযজ্ঞ জেলাবাসীর উপকারে আসবে না বলেও তাঁদের মত। এই অন্যায় ঠেকাতে হবে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক আয়োজনে উপস্থিত বক্তারা। ঐক্যবদ্ধ নাগরিকরা সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করার জন্য নাগরিক কমিটিরও ঘোষণা দেন তারা। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরীকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রফেসর (অব:অধ্যক্ষ মৌলভীবাজার কলেজ) সৈয়দ মুহিবুল ইসলাম ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. রবিউল লেইছ রোকেসকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেলা জাসাস’র সাধারণ সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন সুজনকে।
অ্যাড. হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ও মুনাজ্জির হোসেন সুজন’এর সঞ্চালনায় নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসাইন, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন, শিক্ষাবিদ ধূর্জটি কুমার বসু, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মনোয়ার আলী, সিনিয়র আইনজীবী ও কলামিষ্ট হোসেন তওফিক চৌধুরী, আইনজীবী মল্লিক মঈনউদ্দিন সোহেল (পিপি), শিক্ষাবিদ সৈয়দ মুহিবুল ইসলাম, যোগেশ্বর দাশ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল লেইছ রোকেস, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আকবর আলী, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাড. মাসুক আলম, রাজনীতিবিদ রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, আইনজীবী বজলুর রশিদ, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত, জেলা জাসাস এর সভাপতি ও পৌর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, এডিশনাল পিপি জিয়াউর রহিম শাহীন, সাংবাদিক মহসিন রেজা মানিক, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমনদ্দোজা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ শহর বড় হবে। সুনামগঞ্জ আলোকিত হবে। শহরের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসন সমস্যায়ও পড়তে হবে না। জেলার বেশিরভাগ মানুষ উপকৃত হবেন। অন্য জেলার শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা হবে। সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। পরিবেশের ক্ষতি হবে না এমন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কাজ করবে উক্ত কমিটি।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন সুজন,বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দুটি জায়গার প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে একটি জেলা সদরের ঝাওয়ার হাওরের রসুলপুর মৌজায়। যেখানে ৯৫ একর খাস জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সুনামগঞ্জ শহরের বহুমুখী সম্প্রসারণ হবে বলে মন্তব্য করেন সুজন। অপরটি শহরের উপকণ্ঠের গৌরারং ইউনিয়নের রতনশ্রী মৌজার ১৪ নম্বর জে.এল ভুক্ত এলাকায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানে প্রচুর খাসজমি আছে। সরকারকে জমির জন্য কোন মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। এর বাইরেও বিকল্প প্রস্তাব থাকলে সকলে মিলে সেই জায়গার প্রস্তাব করে কাজ এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সুজন।