সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিন

সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ইংরেজিতে বলা হয় ব্ল– ইকোনমি, বাংলায় যা সুনীল অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত। উন্নত বিশ্বে এই অর্থনীতির গুরুত্ব অনেক বেশি হলেও, বাংলাদেশে সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদারকরণে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সমুদ্রসম্পদ আহরণে তেমন জোরালো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ের পর বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ছিল, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সম্পদ আহরণের জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমুদ্র অর্থনীতি কেবল অগভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ সমুদ্র থেকে হাজারো ধরনের আইমেটের সামগ্রী উদ্ধার করা সম্ভব। বর্তমানে সমুদ্রকেন্দ্রিক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসব কার্যক্রম অর্থনীতিতে অবদানও রাখছে। কিন্তু পরিকল্পিত উপায়ে সমুদ্রকে কাজে লাগাতে পারলে যে হারে সমুদ্র থেকে সুবিধা আহরণ করা সম্ভব তার কানাকড়িও বাংলাদেশ এখনও করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে সমুদ্র নিয়ে কাজ করা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। এমনটিই উঠে এসেছে গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘সমুদ্র বিজয়ের ১১ বছরেও সুনীল অর্থনীতির পালে হাওয়া নেই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সরকারের ৯টি মন্ত্রণালয় সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য একক কোনো সংস্থা নেই। ফলে সমুদ্রে কাজ চললে যার যার মতো করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পকিল্পনার লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়ন করতে হলে সুনীল অর্থনীতি বিষয়ে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এমনকি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৪তম অভীষ্টেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা পরিপালন করতে হলে সরকারকে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। কাজেই এর ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বমানের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ব ব-দ্বীপ বা ডেল্টা ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে এগিয়ে নেদারল্যান্ডস। সেই দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সুনীল অর্থনীতির বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই টেকসই উপায়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা যায়। এ বিষয়ে এখন থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের অধীনে যে উইং খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটি যাতে যথাযথভাবে কাজ করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।