সুন্দরবন এখন বাণিজ্যমেলায়

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় বাণিজ্যিক স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৫৮৯। মেলায় ১৭টি দেশের ৪৩ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। আকর্ষণীয় পণ্য ও সেবা নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান পসরা সাজিয়েছে এখানে। মেলার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে সুন্দরবন ইকোপার্ক প্রকল্পটি। এখানে রয়েছে সুন্দরবনের বিচিত্র গাছপালা-পশুপাখিসহ জীববৈচিত্র্যের নানা সমারোহ। সব জীবন্ত না হলেও কিছু জীবন্ত পশুপাখি হাজির করা হয়েছে এতে। মেলায় আসা নানা বয়সের মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে এ আয়োজন।

৫০ ফুট প্রস্থ ও ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই পার্কে আরও রয়েছে খাল ও জলাশয়। খালে কৃত্রিমভাবে বসানো হয়েছে দুটি কুমির। বনজ গাছের পাশাপাশি এই ইকোপার্কে রয়েছে ফলদ গাছের সমাহার। সব মিলে এটিকে একটি মিনি সুন্দরবনে রূপ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সুন্দরবন ইকোপার্ক ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় যুক্ত করা হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যমেলায় প্রকল্পটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হলেও গতবারের মেলায় স্পন্সরের অভাবে পার্কটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

মেলার ক্রেতা-দর্শনার্থীর সামনে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গকে তুলে ধরতে এ ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ডিজাইনার মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন। এজন্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ইকোপার্কের ডিজাইনার জামিউর রহমান লিমন শেয়ার বিজকে জানান, ২০১৩ সালে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু প্রথম মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বিনামূল্যে যায়গাটুকু দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি সাজসজ্জার জন্য স্প›নসরের পেছনে ছুটতে হয়েছিল। গত বছর স্পন্সর না পাওয়ায় মেলায় অংশ নিতে পারিনি। বড় কোনো স্পনসর হলে পার্কটি আরও সুসজ্জিত করা যেত। স্পনসরের অভাবে অনেক জীবন্ত প্রাণী আনা সম্ভব হয়নি। ইচ্ছে ছিল এবারের মেলায় জীবন্ত সব পশুপাখি-গাছপালা দিয়ে ইকোপার্ক সাজানোর।

মেলায় ঘুরতে আসা চমক বিনতে ইকবাল বলেন, পার্কটি বেশ অকর্ষণীয়। নানা কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। হয়তো এক সময় এসব বৃক্ষ ও পশু-পাখি আর পাওয়া যাবে না। তাই সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে ইকোপার্ক ভালো ভূমিকা রাখবে।

প্রতীকী এই সুন্দরবনে স্থান পায়েছে ফাইবারের তৈরি ৪০টি পশু-পাখি। এছাড়া এখানে বিচরণ করতে দেখা গেছে কচ্ছপ, খরগোশ, বনমোরগ, তিতিরসহ বিভিন্ন ধরনের হাঁস। খালের পানিতে রয়েছে মাছ ও মাছ ধরার পলো। পাশে একটি গাছে শুকানো হচ্ছে মাছ ধরার জাল। যেহেতু সুন্দরবন সম্পর্কে ধারণা দিতে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাই বিচিত্র গাছপালাও রয়েছে এখানে। গোলপাতা, গেওড়া, কেওড়া, কেয়া, এরিকা পাম, আম, জাম, পাই, তাল, সুপারি, ডালিম, কড়ইসহ রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। এখনও এসব গাছ সতেজ ও সবুজ থাকলেও কিছুদিন পর নিস্তেজ হয়ে যেতে পারেÑএমন আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে সতেজ রাখার জন্য নিয়মিত পানি দেওয়াসহ নানা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, অজগর প্রভৃতি। ডালে ঝুলছে বানর। প্রাণহীন হলেও মনে হয় জীবন্ত প্রাণীগুলো। এক মাসের জন্য নির্মিত এ পার্কের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন প্রায় ২৫ কর্মী। এটি তৈরি করতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছেÑজানালেন পার্কটি বাস্তবায়নকারী ও নির্দেশকরা।

 

রাহাতুল ইসলাম