বিশ্ব চরাচরে ভালো-মন্দ ও সত্য-মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। এখান থেকে যারা সত্যকে খুঁজে নিতে পারেন, তারা আলোকিত মানুষ হিসেবে বিশ্বকে এগিয়ে নেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেন। সেরা চিকিৎসকও সফল হন না, যদি চিকিৎসাপ্রার্থী কোনো তথ্য গোপন করেন। এটি আইনজীবীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই ‘চিকিৎসক ও আইনজীবীর কাছে আংশিক তথ্য নেই’ কথাটি প্রবচনে পরিণত হয়েছে।
কেবল চিকিৎসা ও আইনি সেবা নয়, সব ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য-উপাত্ত অত্যাবশ্যক। এটি না পেলে করণীয় নির্ধারণও অসম্ভব। প্রত্যাশিত মান বজায় রেখে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কি না, সেটি বুঝতে হলেও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। এসব তথ্য সরকারকে সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণে সহায়তা করে। গবেষক-বিশ্লেষকরাও তথ্য-উপাত্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সরকারকে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন। কিন্তু তথ্য বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য না হলে দেশের প্রকৃত অবস্থা উঠে আসে না। তাতে সরকার যেমন আত্মমূল্যায়ন করতে পারে না, তেমনই গবেষক-বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণও ফলপ্রসূ হয় না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অংশীদারিত্বে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত দুদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন রোববার বক্তারা বলেন, সময়মতো সঠিক উপাত্ত প্রকাশে সরকারের অনীহা রয়েছে। উপাত্তের ঘাটতি চিহ্নিত হলেও তা নিরসনে উদ্যোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
সরকার সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে না বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। যেমন, কভিড নিয়ে সরকার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, বরং লুকোছাপা করছে বলে এক ধরনের জনশ্রুতি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকেই সত্য তথ্য দেয়া হচ্ছে না বলে সমাজের নানা প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠেছে। আমরা মনে করি, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না, বরং জনদুর্ভোগ বাড়ে। তাই সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ হওয়াই শ্রেয়। এতে সরকারের পক্ষে জনকল্যাণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ সহজতর হয়। তাই সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া তথ্যের মান নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ-সংশয় দীর্ঘদিনের। আমরা জানি না, প্রয়োজনীয় তথ্য সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছে কি না সংস্থাটি। বাস্তব অবস্থার সঙ্গে কোনো উপাত্তের অমিল হলে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে। কিছু বিষয় আছে, যা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
অনেক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে সিপিডি বলেছে, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় সরকার নগদ প্রণোদনা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি/সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?’ তাই সুষম উন্নয়নের জন্য সঠিক উপাত্তের উপযোগিতা অনুধাবনপূর্বক সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।