নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : দেশের পুঁজিবাজারে কয়েক মাস ধরে চলা ধারাবাহিক দরপতনের কারণে ইতোমধ্যে গভীর সংকটে রয়েছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে লেনদেনের খরা, যা বাজারের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা কমেছে। বিপরীতে দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে। তবে ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক, ডিএসইএক্স, আগের দিনের চেয়ে ৩০ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৭ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে এই উত্থান সত্ত্বেও দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের সূচক গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানেই রয়ে গেছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে। সেইসঙ্গে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০২টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১১৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৮৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২৬ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৫৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৪১ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৯টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ৯টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ১০ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৮টি শেয়ার ও ইউনিট ৮৬ হাজার ৯০০ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ১৬৪টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৬৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ২৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে এই উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও, সূচক এখনও সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকায় বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। কিছু খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে। তবে বেশ কিছু শেয়ারে মুনাফা তোলার প্রবণতাও দেখা গেছে। আগামী দিনে বাজারের গতিবিধি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দেখার বিষয়। এদিকে টানা পতনের এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না, সেদিকেই এখন বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি।