সূচকের গতি ও শেয়ারদরে সামঞ্জস্য নেই

রুবাইয়াত রিক্তা: পুঁজিবাজার বর্তমানে গতিশীল অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন সূচক ও বাজার মূলধনের নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি লেনদেনও সন্তোষজনকহারে বাড়ছে। তবে বাজার ইতিবাচক হলেও প্রতিদিনই বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমছে। সাধারণত সূচক ও লেনদেন বাড়ার অর্থ বেশিরভাগ শেয়ারের দর বাড়বে। কিন্তু ঘটছে এর ঠিক উল্টো। লেনদেন ও সূচক বাড়ছে কিন্তু শেয়ারদর কমছে। পুঁজিবাজারের এই উল্টো আচরণের অর্থ কী? অন্যদিকে বাজার ইতিবাচক দেখালেও মৌলভিত্তির শেয়ারের দর সেভাবে বাড়ছে না। বরং অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারের দর। কারণ এসব শেয়ার নিয়ে খেলা করে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী ভালো মুনাফা তুলে নিচ্ছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন, তারা ধরা খাচ্ছেন। কারণ তাদের লক্ষ্য থাকে অল্প সময়ে কীভাবে মুনাফা করা যায়। তাই তারা সব সময় গুজব বা উড়ো খবরের সন্ধানে থাকেন। আর এ খবর সঠিক সময়ে পেলে কিছু মুনাফা করেন। কিন্তু সামান্য দেরি হলেই ধরা খেয়ে যান।

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩২৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হওয়া ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির। শতাংশের হিসেবে প্রায় ৬০ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির লেনদেন হওয়া ১৪ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে সাতটির। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। ‘এন’ ক্যাটগরিতে লেনদেন হওয়া সাত কোম্পানির একটির দরও বাড়েনি। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ২৬১ কোম্পানির মধ্যে ৯৫টির দর বেড়েছে।  অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারদর বেড়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। যার কারণেই বাজারের গতি এমন সামঞ্জস্যহীন। গতকাল দরবৃদ্ধির শীর্ষ পর্যায়েও ছিল ‘জেড’ ক্যাটাগরির আধিপত্য। ‘জেড’ গ্রুপের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। শ্যামপুর সুগারের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে ‘এ’ ক্যাটাগরির হলেও মাত্র দুই কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি জেমিনি সি ফুড হল্টেড হয়েছে। অর্থাৎ এর বিক্রেতা পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটির খুব ভালো লভ্যাংশ দেয়ারও রেকর্ডও নেই। তা সত্ত্বেও এত ক্ষুদ্র একটি কোম্পানির শেয়ারের দর কীভাবে ৫২২ টাকা হয়। গত এক বছরে এর সর্বোচ্চ দর দুই হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

গতকাল সবচেয়ে ইতিবাচক ছিল আর্থিক খাত। এ খাতের প্রায় ৭৪ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেন হয়েছে প্রায় ২১২ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৯ শতাংশ। এ খাতে লেনদেন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২৮ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে ১৭২ কোটি টাকা লেনদেন বাড়লেও মাত্র ৩০ শতাংশ বা ৯ কোম্পানির দর বেড়ছে। প্রকৌশল খাতে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি টাকা। ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি টাকা।