সূচকের বড় পতন সর্বনিন্ম দামেও ক্রেতা নেই

মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৬৭ পয়েন্ট কমেছে। সেই সঙ্গে বড় ব্যবধানে কমেছে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দরপতনের সর্বনিন্ম সীমাতেও ক্রেতা সংকট বাজার পতনের মূল কারণ।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এক দিনে শেয়ারের দরপতনের যে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই সীমার মধ্যে বেশিরভাগ শেয়ারেরই ক্রেতা পাওয়া যায়নি গতকাল। যেসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল, তারাও সংখ্যায় কম।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন শুরু হয়েছিল সূচক বেড়ে। সে সময় বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। এর মধ্যে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে একটি জাতীয় দৈনিকের একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বলা হয়, দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ বাতিল করে আগের মতোই ১০ শতাংশ করতে যাচ্ছে বিএসইসি। সকাল ১০টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয় দরপতন। বেলা ২টার দিকে ৭৫ পয়েন্ট পড়ে যায় সূচক। দিন শেষে আগের দিনের চেয়ে ৬৭ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন।

এদিকে ‘সর্বনিন্ম দামেও’ ১০০-এর বেশি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে লেনদেন শুরু হওয়ার পরই দেখি প্রায় ১০০ কোম্পানির ক্রেতা নেই। অদ্ভুত বাজার। এমন বাজার আমি আমার এই জীবনে দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে গুজব ছিল, দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ বাতিল করে আগের মতোই ১০ শতাংশ করতে যাচ্ছে বিএসইসি। সম্ভবত সেই গুজবেই কেউ শেয়ার কিনছে না।’

যদিও লেনদেন চলাকালে বিষয়টি সত্য নয় বলে গণমাধ্যমের কাছে খোলাসা করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিষয়টিকে গুজব উল্লেখ করে তিনি জানান, শেয়ারদরের নিচের সার্কিট ব্রেকার শিগগির ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবেÑএমন কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বানোয়াট। কিন্তু তারপরও ফেরেনি বাজার।

এদিন টাকার অঙ্কে লেনদেন হয়েছে ৬১৬ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা ১১ মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর চেয়ে কম ৬০২ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা হাতবদল হয়েছিল ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল। খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাত। লেনদেনের ১৮.৯ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। এরপরই যথাক্রমে বিবিধ ১২.১ শতাংশ, ব্যাংক ১১.৫ শতাংশ, ফার্মা ১০.৫ শতাংশ, প্রকৌশল ৮.৫ শতাংশ ও সাধারণ বিমা খাতে ৬.৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের ছয় শতাংশের কম লেনদেন হয়েছে।

গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে কেবল ২৩টির, কমেছে ৩৩৯টির দর আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির দর। এর মধ্যে অন্তত শতাধিক কোম্পানির কোনো ক্রেতা ছিল না, যা পুঁজিবাজারে সচরাচর দেখা যায় না। এর প্রভাবে ডিএসইএক্স ৬৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৬৯৮ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৩ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক কমেছে ২৩ পয়েন্ট।

সূচক পতনের ভূমিকা রাখা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। সবচেয়ে বেশি ৬.৮ পয়েন্ট সূচক পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১.৩৪ শতাংশ কমার কারণে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.৯৫ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে রবির কারণে। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ১.৭২ শতাংশ। আইএফআইসির শেয়ারদর ৭.৬৪ শতাংশ কমার কারণে সূচক পড়েছে ৩.২১ পয়েন্ট।