মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। বড় ব্যবধানে কমেছে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ। বড় মূলধনি কোম্পানিতে ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে। এসব কোম্পানিতে মুনাফা গ্রহণের কারণে ব্যাপক বিক্রয় চাপ এই পতন বয়ে এনেছে।
লেনদেন বিশ্লেষণ ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গতকাল প্রধান খাতগুলোয় প্রচুর মুনাফা গ্রহণে শেয়ার বিক্রি বাজারকে নিচের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ পয়েন্টের বেশি হ্রাস পেয়ে ‘মনস্তাত্ত্বিক স্তর’ সাত হাজারের নিচে চলে গেছে। এছাড়া ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগে নতুন অবস্থান নিতে সুযোগ খুঁজেছেন বিনিয়োগকারীরা, যার কারণে তাদের বেশিরভাগই ‘সাইড লাইনে’ ছিলেন। ফলস্বরূপ ট্রেডিং কার্যক্রম কিছুটা মন্থর ছিল।
এদিন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা লেনদেনে স্পষ্ট হয়েছে। ডিএসইতে এক হাজার চার কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ২০৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। বুধবার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার।
গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। এছাড়া শীর্ষ লেনদেন হওয়া খাতের মধ্যে একমাত্র এ খাতে গতকাল দর বৃদ্ধি দেখা গেছে। খাতটির ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কোম্পানি দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৪১ দশমিক ৬৭ শতাংশের দরপতন হয়েছে। পরের অবস্থানে থাকা খাতগুলোর মধ্যে যথাক্রমে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৬ দশমিক ৪৪, প্রকৌশল ১১ দশমিক ১০, বস্ত্র আট দশমিক ৩০, খাদ্য সাত দশমিক ৯৬ ও ব্যাংক খাতে সাত শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন পাঁচ শতাংশের নিচে ছিল।
বিবিধ ছাড়া গতকাল শুধু আইটি খাতে ৫০ শতাংশ কোম্পানির দর বৃদ্ধি দেখা গেছে। এছাড়া প্রধান খাতগুলোয় ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে ওষুধ খাতে ৬৭, প্রকৌশলে ৬১, বস্ত্র ৬৩, খাদ্য ৬৬, ব্যাংক ৭৫, সাধারণ বিমা ৭০, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৯৫ ও জ্বালানি খাতে ৮২ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরপতন হয়েছে।
গতকাল পুঁজিবাজারের এমন পতনের বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের ম্যানেজার শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট নিয়ে সর্বশেষ যে সিদ্ধান্তের কথা শোনা যাচ্ছে যে, ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ কস্ট প্রাইসে ধরা হবে, তবে ব্যাংকের বিনিয়োগ মার্কেট ভ্যালুতে গণনা করা হবে। এটা হয়তো অনেকের মনঃপূত হয়নি, যার কারণে হয়তো বিনিয়োগ কমেছে, সেল প্রেশার বেড়েছে। ফলে পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৭৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে ২৫৭টির এবং দর ধরে রাখতে পেরেছে ৪৫টি কোম্পানি। এর প্রভাবে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৯৯১ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ২৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমেছে।
গতকালের সূচক পতনের পেছনে বড় মূলধনি কোম্পানির দর পতন বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ারদর দুই দশমিক ৯৯ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় সূচক কমেছে চার দশমিক ৬১ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে এক দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়া রেনাটার দর এক দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে তিন দশমিক ২৩ পয়েন্ট ও রবির এক দশমিক ০৬ শতাংশ দর কমায় সূচক কমেছে তিন দশমিক ১৬ পয়েন্ট। এছাড়া গতকাল সূচক হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড, ওয়ালটন হাইটেক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইউনাইটেড পাওয়ার। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ২৭ দশমিক ৯২ পয়েন্ট।
বিপরীতে যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, সেগুলো সূচকের উত্থানে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ এক দশমিক ১১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে তিন দশমিক দুই শতাংশ। বাকি কোম্পানিগুলোর কোনোটিই সূচক এক পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি।