কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিয়ে সমালোচিত বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই বিচারককে আর আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

আজ রোববার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।”

আরও বলা হয়, “তার ফৌজদারী বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।”

এর আগে শনিবার (১৩ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা নেওয়া যাবে না, বিচারকের দেওয়া রায়ের এমন পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।” 

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে তারিখে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীদের একজন।

মামলার আসামিরা হলেন- সাফাত আহমেদ, সাফাতের দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম ও সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।

২০১৭ সালের ৮ জুন পুলিশ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ওই বছরের ১৩ জুলাই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন আদালত।

এ মামলায় মোট ৪৭ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ২২ আগস্ট মামলার সাক্ষ্য রেকর্ড করা সম্পন্ন হয়।   

পরবর্তীতে এ বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন আদালত। মামলায় কয়েকটি পর্যবেক্ষণও দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার।

এ সময় আদালত বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। অযথা আদালতের সময় নষ্ট করা হয়েছে।    

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের ডাক্তারি প্রতিবেদনে কোনো সেক্সুয়াল ভায়োলেশনের (যৌন সহিংসতা) বিবরণ নেই। ভুক্তভোগীর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা আসামিদের সঙ্গে মেলেনি। ৩৮ দিন পর এসে তারা (দুই ছাত্রী) বললো ‘রেপড হয়েছি’, বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার বিবেচনা করা উচিত ছিল। তা না করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের ‘পাবলিক টাইম নষ্ট’ করেছেন বলে পর্যবেক্ষণে বলেন বিচারক।

আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। পুলিশ যেন ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়। 

বিচারক রায় পড়ার সময় বলেন, আপনারা বলছেন- এটি একটি আলোচিত মামলা, কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে সব মামলাই আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। এ মামলাটির মেডিকেল রিপোর্টে কিছুই পাওয়া যায়নি এবং ডাক্তাররা কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

এই মামলার রায় এবং আদালতের পর্যবেক্ষণ ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। 

রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী অধিকারকর্মী, পেশাজীবী ও শিল্পীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। 

‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’ শিরোনামের সে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা যৌন নির্যাতনের বিচারের ব্যাপারে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনের ধারা  ১৫৫ (৪) বাতিলের দাবি জানান।

ধারাটিতে বলা হয়েছে, “কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে সোপর্দ হয়, তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রসম্পন্ন নারী।”