সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামানের মৃত্যু দিবস আজ

মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামানের মৃত্যু দিবস আজ। ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ যশোরে তার জন্ম। তার পিতা খান সাহেব কাজী সদরুল ওলা এবং মাতা রতুবুন্নেসা। তিনি ১৯৩৯ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪১ সালে আইএসসি পাস করেন। একই কলেজে ১৯৪৩ সালে কেমিস্ট্রিতে অনার্স ক্লাসে অধ্যয়নকালে কাজী নূরুজ্জামান রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভিতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বার্মা এবং সুমাত্রায় মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৪৬ সালে তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি থেকে আর্মিতে চাকরি স্থানান্তর করে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর কাজী নূরুজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল আর্টিলারি স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে কাশ্মীর যুদ্ধে ঝিলাম সেক্টরে যোগ দেন এবং একই সালে পাকিস্তানের নওশেরায় আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে প্রশিক্ষক নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি অফিসার ট্রেনিং স্কুলের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাজী নূরুজ্জামান ১৯৫৬ সালে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৫৮ সালে স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করেন।

১৯৬২ সালে তিনি প্রেষণে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (ইপিআইডিসি) যোগ দেন। এখানে পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিলে ১৯৬৯ সালে তিনি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন এবং ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে কাজী নূরুজ্জামান ৭নং সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন।

আশির দশকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি ছিলেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশ নেন । ২০০৭ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠনে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্ব ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কাজী নূরুজ্জামানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে।
কাজী নূরুজ্জামান সাপ্তাহিক নয়া পদধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে স্বদেশ চিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা।

ঢাকা সিটি করপোরেশন তার নামে ঢাকার পান্থপথে একটি সড়কের নামকরণ করেছে বীর উত্তম কাজী নূরুজ্জামান সড়ক। ২০১১ সালের ৬ মে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।

[সংগৃহীত]