সেন্সর বোর্ডের খাঁচায় কত দিন বন্দি থাকবে ‘শনিবার বিকেল’!

রেজাউল করিম খোকন: রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ফারাজ’ ছবিটি। ছবিটি বানিয়েছেন মুম্বাইয়ের এক গুণী মেধাবী চিত্রনির্মাতা হংসল মেহতা। বলিউডে বাংলাদেশের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ংকর জঙ্গি হামলার আলোচিত ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা জানা গিয়েছিল আগেই। এরই মধ্যে সেই বলিউডি সিনেমা ‘ফারাজ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। ‘ফারাজ’ ছবির পরিচালক হংসল মেহতা এরই মধ্যে সেই ছবিটির পোস্টার টুইটারে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় হলো একে পরাজিত করা। এটা বিভক্ত সময়ের গল্প। ইনস্টাগ্রামে দেয়া এক বিবৃতিতে হংসল মেহতা জানিয়েছেন, তরুণেরা কীভাবে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন, তা আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন সিনেমায়। সেইসঙ্গে সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যে অসম সাহস ও মানবতার প্রয়োজন, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে তার নির্মিত ছবিটিতে। ‘ফারাজ’ ছবিটি এরই মধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তরুণ ফারাজ আইয়াজ হোসেন। তখন চাঞ্চল্যকর নৃশংস ঘটনাটি পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখান থেকেই গল্পগুলো প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করে সেভাবেই ‘ফারাজ’ ছবির চিত্রনাট্য সাজান পরিচালক হংসল মেহতা। এই ছবির গল্পের মাধ্যমে গভীরভাবে দেখানো হয়েছে ধর্মীয় বিষয়গুলো বিভিন্ন মানুষের কাছে কী অর্থ বহন করে। ছবিটি তরুণদের মনে গভীরভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী তিনি। ‘ফারাজ’ এমন একটি গল্প, যা বলা খুব প্রয়োজন। বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া ঘটনাটি ছবিটিতে নিপুণভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বলিউডের অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের গুণী চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এরই মধ্যে তার নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র, টিভি নাটক ও ওয়েব সিনেমায় তার অসাধারণত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি বাংলাদেশের সিনেমাকে নিয়ে গেছেন, অধিষ্ঠিতও করেছেন উজ্জ্বল এক অবস্থানে। তার প্রতিটি কাজেই রয়েছে ভিন্ন চিন্তার অপূর্ব প্রকাশ। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঢাকার গুলশানে সংঘটিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত সেই নৃশংস ট্রাজিক ঘটনাবলি নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি, যেখানে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকজন গুণী মেধাবী অভিনয় শিল্পী। ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে তা দেশের গুণীজন, সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী ও সচেতন নাগরিক মহলের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে বহুল আলোচিত হƒদয়ে নাড়া দেয়া একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি দেখার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছিলেন। সেলুলয়েডে সেই ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায় থাকা অগণিত সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক মহল ও সংস্কৃতিকর্মী আজও ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি দেখতে পারেননি। সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে আলোচিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছবিটির মুক্তি আটকে আছে প্রায় চার বছর। যথাসময়ে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটির সব কাজ শেষ করেছিলেন পরিচালক ফারুকী। নির্মাণ শেষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছিল অনুমোদনের জন্য। সেন্সর বোর্ড সদস্যরা প্রথমে ছবিটি দেখে একটি অনবদ্য চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এরকম একটি বাস্তব ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র অবিলম্বে দর্শকদের সামনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়েছিল তখন। হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি আবার দেখে এর বিভিন্ন বিষয় ও দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তোলেন। ফলে ছবিটি প্রদর্শনীর ব্যাপারে একধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আটকে দেয়া হয়। ছবিটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, তেমন অজুহাত তুলে এর প্রদর্শনীর অনুমোদন দিতে আপত্তি তোলা হয়েছে। তখন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তিকৃত কিছু দৃশ্য পরিবর্তন সাপেক্ষে আবার সেন্সর বোর্ডে পেশ করার কথা বলা হয়। সে মোতাবেক দৃশ্যগুলো পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন করে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি আবার জমা দেয়ার পর এরই মধ্যে বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেছে।

বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না দেখিয়ে ছবিটিকে আটকে রেখেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নির্মাতা, কুলাকুশলী, অভিনয়শিল্পী, দর্শক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক মহল ও সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়েছে। সব ধরনের বাধা, আপত্তি ও নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত ছবিটি যাতে অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, তেমন দাবি জানানো হয়েছে। স্বাধীনভাবে গল্প বলার সুযোগ সৃষ্টির দাবি তোলা হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, কলাকুশলী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারদের পক্ষ থেকে। সেন্সর বোর্ডের বেড়াজাল থেকে শিল্প-সাহিত্য ও চলচ্চিত্র তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে মুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে সেখান থেকে। যে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রথমে দেখার পর এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে ছবিটির চিত্রনাট্য জমা দেয়ার পর অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেছিল, সেই ছবিটি পরবর্তী সময়ে আশ্চর্যজনকভাবে নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ল। তার নেপথ্যের কারণ এখনও জানেন না ছবিটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরিতাপের বিষয় হলো, একই ঘটনা নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নির্মিত ‘ফারাজ’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে। অথচ নিজ দেশেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটির মুক্তি ও প্রদর্শনী অজ্ঞাত কারণে রহস্যজনকভাবে আটকে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। এরই মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং উচ্চ প্রশংসা লাভ করেছে। যে ঘটনাটি দুনিয়াজুড়ে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার করেছিল, সেই হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত নৃশংস ট্রাজিক ঘটনানির্ভর ছবিটি দেশের মানুষ দেখতে ভীষণভাবে আগ্রহী। জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য গোটা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে এবং আলাদা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সেই জঙ্গি সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নিয়ে নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি মুক্তি পেয়ে প্রদর্শিত হলে সব শ্রেণির দর্শক এ বিষয়ে আরও অনেক বেশি সচেতন এবং তার বিরুদ্ধে নিজেদের সোচ্চার মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পাবে বলে মনে করি। দেশ-বিদেশে এ বিষয়ে আরও জোরালো জনমতও গড়ে উঠবে।

গতানুগতিক ধারার বাইরে ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণের নানা পরীক্ষা চলছে আরও অনেক আগে থেকেই। তবে অতীতে ভিন্ন ধারার সিনেমা নির্মাণে এতটা সক্রিয় ছিলেন না নির্মাতারা। আজ যেভাবে নিত্যনতুন গল্পের প্লট নিয়ে ভিন্নতর উপস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করছেন বিভিন্ন নির্মাতা, তখন এটা আজকের মতো এতটা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল না। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমার পর বাংলাদেশ আজকে যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তা গোটা বিশ্বে দারুণ এক বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে আমরা সমৃদ্ধির চমৎকার একটি অবস্থানে অধিষ্ঠিত। স্বাধীনতা লাভের পর ৫১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে পথ চলা শুরু করেছি। এখন আমাদের কূপমণ্ডূক পুরোনো ধ্যানধারণা, মূল্যবোধ, সংস্কার ও বিধিবিধান আঁকড়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন আমাদের আধুনিক স্মার্ট ধ্যানধারণার অনুসারী হতে হবে। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আধুনিক স্মার্ট দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী হয়ে বহুল আলোচিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি প্রদর্শনীর অনুমোদন প্রদানে বাস্তব অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।

এভাবে লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক চলচ্চিত্রকারদের নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রকাশে তার শিল্পকর্ম চলচ্চিত্র, গল্প, নাটক, সিনেমা সবার সামনে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হলে ভবিষ্যতে দেশে সৃজনশীলতার ধারা রুদ্ধ হয়ে পড়বে। মুক্ত-স্বাধীন সাংস্কৃতিক বিকাশকে বাধা দেয়া হলে সামাজিক রাজনৈতিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হবে, এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে সিরিয়াসভাবে। আমাদের চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড এখনও ১৯১৮ ঔপনিবেশিক কাঠামো বা ভাষার বাইরে বের হতে না পারার বিষয়টি বলা যায় এ প্রসঙ্গে। এত পালাবদলের পরও ব্রিটিশ সরকারের তৈরি করা সেই নিপীড়নমূলক আইনের স্পিরিট অব দ্য ল’ বা মূলভাবনা আশ্চর্যজনকভাবে পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ, পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনামল থেকে নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের  যুগেও কি ভাষায়, কি সংস্কৃতিতে শাসক আর শাসিতের সেই পুরোনো আমরা-তোমরা বাইনারি মেজাজেই রয়ে গেছে। এই সময়ের চ্যালেঞ্জটাকে আমলে না নিয়ে নির্বিকার বসে থাকার সুযোগ নেইÑএটা উপলব্ধি করতে হবে সব পক্ষকেই। এখন ডিজিটাল বেনো জলে ভেসে যাচ্ছে গোটা দুনিয়া। আন্তর্জালের এ সময়ে ডিজিটাল নো ম্যানস ল্যান্ডে মানুষের বসত। তাবৎ দুনিয়ার সিনেমা ও টিভি সিরিজ পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আজকের তরুণ-তরুণী। দেশি-বিদেশি নানা কনটেন্ট এখন ইচ্ছামতো মোবাইল ফোন সেট, টিভি ও ল্যাপটপে দেখা যায় অবাধে। সেজন্য কোনো সার্টিফিকেট লাগছে না। ওটিটির বদৌলতে সারা দুনিয়ার বিনোদনসম্ভার ঘরে বসেই উপভোগ করা যায়, সিনেমা হল পর্যন্ত যেতে হয় না দর্শককে। গত এক দশকে আমাদের চলচ্চিত্র ও ওয়েব কনটেন্ট দুনিয়াজুড়ে দর্শকদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা বিশ্ব চলচ্চিত্র মঞ্চে একের পর এক নতুন দিগন্তের উšে§াচন করছেন। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ওটিটির বাজার দাঁড়াবে এক হাজার কোটি টাকার। এই দশকেই এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতি হওয়ার হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। অথচ এই নতুন বাংলাদেশের ইমেজ তৈরি করবেন যে চলচ্চিত্রনির্মাতা, তাদের এখনও গল্প বলার স্বাধীনতার দাবিতে কাঁটাতারের বেড়ার পেছনে গিয়ে বসতে হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। স্বাধীনভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশের সুযোগ সমাজে এক ধরনের সুস্থ চিন্তার পরিবেশ সৃষ্টি করে স্বাভাবিকভাবেই। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এটার প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। সবাইকে এটা সিরিয়াসভাবে অনুভব করতে হবে।  কেবল অর্থনীতিই একটি দেশ বা জাতির উন্নয়নের সূচক হতে পারে না, এর পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সূচকও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সেই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে স্মার্ট বা আধুনিক বলা যায় না। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, চিত্রকর ও সাংবাদিকরা যদি বোবা হয়ে যান, তাহলে সমাজও বোবা হয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। তাঁবেদারি শিল্পচর্চা তাঁবেদার সমাজ তৈরি করে। দর্শনের অভাবে যেমন দিক হারায় রাজনীতি, সংস্কৃতির অভাবে তেমনি পথ হারায় সমাজ। শিল্পী বা শিল্পের কাজই হলো চোখে আঙুল তুলে সেই পথটা দেখিয়ে দেয়া। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট পরিবার ও স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াস চালাতে হবে। এজন্য যা যা প্রয়োজন তা যদি পূরণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে যথার্থ প্রক্রিয়ায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রত্যেককে যার যার নিজের অবস্থান বদলাতে হবে, পরিশুদ্ধ করতে হবে নিজেকে। নতুন চিন্তাভাবনা ও ধারণার উšে§ষ ঘটাতে হবে সমাজে। পুরোনো জরাজীর্ণ ধ্যান-ধারণা ও গতানুগতিক ভাবনা ত্যাগ করতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক