শেয়ার বিজ ডেস্ক : সদ্যবিদায়ী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের নতুন গাড়ি বিক্রির ধস নেমেছে। বিশ্বব্যাপী চিপ সংকটে গাড়ি উৎপাদন কমিয়েছে অনেক কোম্পানি। এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যেও। তবে জ্বালানি সংকটে সেপ্টেম্বরে নতুন গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে মাত্র দুই লাখ ১৪ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। তবে বছরভিত্তিতে এটি ১৯৯৮ সাল থেকে গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ নতুন গাড়ি বিক্রির নিবন্ধন। অন্যদিকে গত মাসে দেশটিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির নতুন রেকর্ড হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল দেশটির বাণিজ্য বিভাগের শিল্পবিষয়ক প্রাথমিক তথ্যে এ কথা বলা হয়। খবর: গার্ডিয়ান।
এর আগে বিশ্লেষকরা সেপ্টেম্বরকে গাড়ি বিক্রির একটি একটি শক্তিশালী সময় নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু বৈশ্বিক চিপ সংকটে উৎপাদন বিলম্বিত হওয়ায় ডিলাররা ভোক্তাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির নতুন রেকর্ড: এদিকে সেপ্টেম্বরে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির নতুন রেকর্ড হয়েছে। দ্য সোসাইটি অব মোটর ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড ট্রেডারস (এসএমএমটি) বলছে, গাড়ি উৎপাদনে ব্যবহƒত সেমিকন্ডাক্টরের অভাবে গাড়ি শিল্প ক্রমগদ জর্জরিত।
এসএমএমটি বলছে, গত মাসের শেষের দিকে পেট্রোল পাম্পগুলো জ্বালানি সংকটে পণ্যবাহী চালকের অভাব দেখা দেয়। ফলে পেট্রোলচালিত গাড়ির পরিবর্তে মানুষ বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়। ফলে দেখা যায়, গত মাসে ৩২ হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে, যা একটি নতুন রেকর্ড। যদিও এর আগে গত আগস্টে চিপ সংকটে ২৭ শতাংশ গাড়ি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল।
লরি-ভ্যান বিক্রি ১৩ বছরে সর্বনি¤œ: এদিকে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে পণ্যবাহী ভ্যান বিক্রিও হ্রাস পেয়েছে। চিপ সংকটে গত মাসে দেশটিতে বছরভিত্তিতে ৪০ শতাংশ ভ্যান বিক্রি হ্রাস পেয়েছে, যা গত ১৩ বছরে সর্বনিম্ন বিক্রি। দেশটির এসএমএমটি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে নতুন ভ্যান বিক্রির জন্য নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৩১ হাজার ৫৩৫টি, যা ২০০৯ সাল থেকে সর্বনিম্ন।
এসএমএমটি বলছে, দুই টন ওজনের ভ্যান বিক্রি কমেছে ৫৪ শতাংশ। যেখানে দুই থেকে আড়াই টন ওজনের বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ।
পেট্রোলের দাম আট বছরে সর্বোচ্চ: এদিকে দেশব্যাপী জ্বালানি সংকটে যুক্তরাজ্যের পেট্রোল স্টেশনগুলো দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে জ্বালানির তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়ে ১৩৬.১ পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত আট বছরে সর্বোচ্চ। আর ডিজেলের দাম এক দশমিক ২৫ পাউন্ড বেড়ে লিটারপ্রতি ১৩৯.২০ পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮২ ডলার হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ’৭০-এর দশক ছাড়িয়ে যাচ্ছে: সরবরাহ শৃঙ্খল বিপর্যয়ে খাদ্যপণ্য থেকে জ্বালানি সব ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশটির অর্থনীতির সংকট ১৯৭০-এর দশককে ছাড়িয়ে যাবে। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তা অস্বীকার করে বলেছেন, জ্বালানি সংকট অচিরেই সেরে যাবে।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি পাঁচ হাজার লরিচালক ও সাড়ে পাঁচ হাজার পোলট্রি খাতের শ্রমিকের (্বিদেশি) জরুরি ভিসা অনুমোদন দিয়েছে। যারা ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে পারবেন। কিন্তু গতকাল প্রধানমন্ত্রী জানান, মাত্র ১২৭ জন জ্বালানি খাতের লরিচালক ভিসার জন্য আবেদন করেছে। যদিও তখনই বলা হয়েছিল, স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ইউরোপীয় শ্রমিকরা আগ্রহী হবেন না। এদিকে দেশব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে গত সোমবার ১৫০ ট্যাঙ্কার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ২২.৬ শতাংশতে পৌঁছেছিল। তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অনেক অর্থ ঋণ করা হয়েছিল।