শেয়ার বিজ ডেস্ক: সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উদ্যোক্তারা। গতকাল শনিবার জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার জাপানের শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা ও মার্কিন শিল্পমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো পরবর্তী প্রজšে§র সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। খবর: দ্য জাপান টাইমস।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় নিশিমুরা এবং জিনা রাইমন্ডো অন্য অংশীদারদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সরবরাহশৃঙ্খল মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কের মতো বহুপক্ষীয় ফোরামে যোগ দেয়া নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৪টি দেশকে নিয়ে ২০২২ সালে ইউএস-নেতৃত্বাধীন একটি অর্থনৈতিক উদ্যোগ চালু করা হয়েছিল।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এবং মার্কিন বাণিজ্য সচিব একটি যৌথ বিবৃতিতে জানান, তারা চিপের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের উন্নয়নের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরিতে দুই দেশের সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহ দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিশিমুরা বলেন, আমরা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি উন্নয়নসহ জাপান-মার্কিন সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে চাই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহযোগিতার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং জৈব-সম্পর্কিত এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জাপানের শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে নিশিমুরা এবং জিনা রাইমন্ডোর এক আলোচনায়, দুই নেতা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্বিতীয় টু-প্লাস-টু অর্থনৈতিক সংলাপ করতে সম্মত হয়েছেন।
২০২২ সালের জুলাইয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৪টি দেশের পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক মন্ত্রীদের একত্র করে উদ্বোধনী আলোচনায় বসে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।
জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তাদের অংশীদাররা চীনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে প্রধান শিল্পসামগ্রীগুলো আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করার প্রচেষ্টা জোরদার করছে বলে জানায় জাপানের শিল্প মন্ত্রণালয়।
এছাড়া চীনে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কাজ করছে জাপান সরকার। চীনে রপ্তানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় এ পদক্ষেপ নিতে চায় জাপান। ওয়াশিংটন গত বছরের অক্টোবরে ঘোষণা দিয়েছিল, গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং অগ্রসর সামরিক ব্যবস্থার বিকাশে ব্যবহার করা যায়, এমন উন্নত সেমিকন্ডাক্টর ও নির্মাণ সরঞ্জাম চীনে রপ্তানির ওপর তারা বিধিনিষেধ আরোপ করবে। উল্লেখ্য, বিদেশি বিনিময় ও বাণিজ্য আইনের অধীন শিল্প খাতের পণ্য রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জাপান। সামরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হয়। জাপানি নির্মাতাদের ওপর প্রভাবের পাশাপাশি সম্ভাব্য চীনা প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন উপাদানগুলোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ সিলিকনের এ ক্ষুদ্র টুকরোকে কেন্দ্র করে বিশ্বে ৫০০ বিলিয়ন (৫০ হাজার কোটি) ডলারের বিশাল ব্যবসা রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তির সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণ করবে, বিশেষ করে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও দেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে, তারাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হওয়ার চাবিকাঠি ধরে রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাপানের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাপানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প পুনরুদ্ধারের জন্য সবশেষ ও বড় সুযোগ হতে পারে ২০৩০ সাল। ২০২২ সালে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী তোশিবা, সনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এক সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপ উৎপাদন খাত পুনরুজ্জীবিত করতে জাপান সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, প্রকৌশলীদের সংকটে সেটি ব্যাহত হতে পারে।
এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় নিশিমুরা ও রাইমন্ডো কয়েকটি বিষয়ে সম্মত হন। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি অনুসারে, ভৌগোলিকভাবে চিপ উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে পারস্পরিকভাবে সহযোগিতা করবে দেশ দুটি।