পাঠকের চিঠি

সেশনজটের কবলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ইকবাল হোসেন: বাংলাদেশের লাখ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রায় শতাব্দীকালের প্রাণের দাবি ছিল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। আট বছর আগে বর্তমান সরকারের হাতেই তা আলোর মুখ দেখেছে। ২০১৩ সালে পাস হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে দেশের ফাজিল ও কামিল স্তরের প্রায় দেড় হাজার মাদ্রাসাকে অ্যাফিলিয়েশন দেয়ার লক্ষ্যে অ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৩-এর সংশ্লিষ্ট বিলে বলা হয়েছেÑ‘মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ ও উন্নতি সাধন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধিসহ মাদ্রাসা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত করার জন্য এই বিল পাস করা হয়েছে।

এত প্রত্যাশা নিয়ে বিল পাস হওয়ার পর ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ধারার ফাজিল (স্নাতক) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের ডিগ্রি দেয়া হয়। ইতঃপূর্বে ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ২০০৬ সাল থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো এবং ফাজিল/স্নাতক এবং কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি প্রদান করা হতো।

কিন্তু কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত ও ধীর গতির। সেশনজটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল তাদের কার্যক্রম। তাই সেই সমস্যা থেকে নিষ্পত্তি পাওয়ার লক্ষ্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও তেমন কোনো সুফল পাচ্ছে না এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীরা। হতাশায় দিন গুনছে শিক্ষার্থীরা।

মহামারি কভিডকালে সৃষ্ট সেশনজটের ফলে ২০২০ সালের ফাজিল পরীক্ষা ২০২২ সালের শুরুতে নিতে সক্ষম হলেও ২০২১ সালের ফাজিল পরীক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষণীয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্নাতক  (সম্মান) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা প্রায় সম্পূর্ণ এবং স্নাতক (পাস) পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সম্পূর্ণ করলেও পুরোপুরি পিছিয়েই আছে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখনও ফরম পূরণই শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।

কিছুদিন আগে ২০২১ সালের পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে করেছে টালবাহানা। যদিও পরীক্ষার ফল দেয়ার নিয়ম হচ্ছে পরীক্ষার তিন মাস পর। কিন্তু তাদের ফল প্রকাশ করতে সময় লেগেছে পাঁচ মাস। সেটাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভয়ে তারা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। 

এ অবস্থায় পরীক্ষার্থীরা ২০২১ সালের পরীক্ষা ২০২২ সালে দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কভিডের কারণে শিক্ষা জীবনে এমনিতেই প্রায় দেড় বছর পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এই সেশনজটের ফলে আরও বেশি হতাশায় ভুগছে। অনেকে হতাশা হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সেশনজট কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পুরোপুরি উল্টো চিত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা সেশনজট কমানো তো দূরে থাক যথাসময়ে পরীক্ষা নিতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।

সব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনায় অতি দ্রুত ফাজিল ২০২১-এর পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাই। একই সঙ্গে প্রতি বছর যথাসময়ে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমাতে এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়