প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান থানা পুলিশ ও নীলফামারী জেলা ট্রাফিক বিভাগের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক আবু নাহিদ পারভেজ ট্রাফিক বিভাগের পক্ষে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’এই স্লোগান সামনে রেখে সৈয়দপুরে বাস টার্মিনাল, ওয়াপদা চত্বর, জিআরপি চত্বর, মদিনা মোড়, পাঁচমাথা মোড়, বঙ্গবন্ধু চত্বরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় পথচারীসহ যানবাহন চালকদের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তারা করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষজনের মাঝে ধারণা দেয়াসহ মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে বাস-মিনিবাস, কার, পিকআপ, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ নানা যানবাহনে করোনা প্রতিরোধের নির্দেশনা সংবলিত স্টিকার লাগিয়ে দেন।
মো. আবুল হাসনাত খান জানান, থানা পুলিশের বিভিন্ন টিম প্রতিটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
মো. আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে না বসলে জরিমানা দিতে হবে যাত্রী ও পরিবহন মালিককে। প্রথম পর্যায়ে অনুরোধ করা হলেও পরবর্তীকালে জরিমানার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তারা।
এদিকে উপজেলায় করোনার টিকা নিতে সব পেশার মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেছে। দিন দিন টিকা নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। তবে টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন হয়ে পড়েছে শহরবাসী। ফলে সড়ক, হাটবাজার, মার্কেট, গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহার না করে অধিকাংশ মানুষ চলাচল করছে।
৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উপজেলায় টিকা নিয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৮০ জন মানুষ। তাদের বেশিরভাগ পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬২ জন পুরুষ ও ৩ হাজার ৩১৮ জন নারী।
উপজেলায় গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতাদের মাঝে মাস্ক পরার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও। অনেকে মাস্ক পরলেও সঠিকভাবে তা পরিধান করছে না। তারা মাস্ক থুতনির নিচে নামিয়ে ঘুরে বেড়ান। ফলে গুরুত্ব হারাচ্ছে মাস্ক পরার সরকারি নির্দেশনা। এসব কারণে টিকা না পাওয়া মানুষের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এমনকি ঝুঁকিতে থাকছেন টিকা নেয়া ব্যক্তিরাও।
শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে চা বিক্রেতা মো. জাহিদ বলেন, আগুনের সামনে কাজ করতে হয়, মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে অস্বস্তি লাগে। তাই মাস্ক থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। টিকা নেয়া এই চা বিক্রেতার মন্তব্য আমরা গরিব মানুষ, আমাদের করোনা আক্রমণ করবে না।
শহরের বাসটার্মিনালসহ নানা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে যাত্রী ভিড়, কারও মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়াই গণপরিবহনে যাতায়াত করছে মানুষ। এ নিয়ে কোনো ভাবান্তরও দেখা গেল না পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজনদের। শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে কাঁচা বাজারেও দেখা গেল একই চিত্র। আশরাফ আলী নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজি বেচার সময় কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুখে মাস্ক লাগিয়ে কথাবার্তা ঠিকভাবে বলা যায় না। ব্যবসার খাতিরে মাস্ক পরা হয় না। শহরের মুদি বাজারে মুন্না নামে এক ব্যবসায়ী জানান, মাস্ক পরে কথা বলা অসুবিধা হয় বলে অনেক কাস্টমার চলে যায়। তা ছাড়া মাস্ক বেশিক্ষণ পরে থাকলে দম আটকে আসে। এ ব্যবসায়ীকে টিকা নেয়ার কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় টিকা নেয়ার সময় হয়ে উঠছে না। একজন কৃষক বলেন, গ্রামে করোনা দেখি না।
চিকিৎসকরা জানান, কভিড-১৯ ঠেকাতে টিকা নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা বেশি কার্যকর। অথচ সরকারের পরামর্শ মানছে না বেশিরভাগ মানুষ। এর জন্য মাঠ পর্যায়ে আরও প্রচার-প্রচারণা দরকার। টিকা নিয়ে অহেতুক ভুল ধারণা রয়েছে সাধারণের মধ্যে, এসব ভুল ধারণা ভাঙাতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার বলেন, আগের চেয়ে সব মানুষের মাঝে টিকা নেয়ায় আগ্রহ বেড়েছে। তবে মাস্ক ব্যবহারে তারা উদাসীন, যা করোনা সংক্রমণ বাড়াতে পারে। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই।