সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে ৭০০ ঝুট কাপড়ের কারখানা

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: সৈয়দপুরে ছোট-বড় ঝুট কাপড়ের ৭০০ কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে উপজেলার প্রায় চার হাজার বেকার। গার্মেন্টের পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় দিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে তৈরি পোশাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অনেক দেশে।

ছোট এ শহরে কারখানা গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয় ঝুট কাপড় ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে পুঁজি সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে সম্প্রসারিত হচ্ছে না এ রফতানি বাণিজ্যের।

জেলার সৈয়দপুর শহরে এ শিল্পকে ঘিরে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ২০টি আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে এমআর ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্ট, এইচআর গার্মেন্ট, জুবেল গার্মেন্ট, সুমি গার্মেন্টসহ প্রায় ২০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান।

সুমি গার্মেন্টের শ্রমিক আরিফা বেগম বলেন, স্বামী পরিত্যক্ত অবস্থায় এখানে পাঁচ বছর ধরে কাজ করে দৈনিক যা পাই তা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ চালিয়ে তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ ভালোভাবে চালাতে পারছি। এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। কারও ওপর ভরসা করে থাকতে হয় না।

জুবেল গার্মেন্টের মালিক ও রফতানিকারক আনোয়ার হোসেন জানান, গার্মেন্টের ঝুট কাপড়ের তৈরি পোশাক খাত থেকে সৈয়দপুরের রফতানিকারকরা বছরে আয় করে থাকেন প্রায় সাত লাখ মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, এ কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে গ্রামের নানা বয়সী নারীরাও।

একই কারখানার শ্রমিক আবদুর রহিম বলেন, আমরা পেশাগতভাবে এ কাজটি বেছে নিয়েছি। কারণ আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া আর কোনো কৃষিজমি বা আবাদি জমি নেই। তাই ক্ষুদ্র গার্মেন্ট কারখানাগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে ঋণ সহায়তা দিলে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের মতো হাজার হাজার কর্মী সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্ট ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

নিজস্ব জায়গার অভাবে ব্যবসায়ীরা শহরের রেলওয়ের জমিতে ছোট ছোট টিনের চালাঘর তৈরি করে সেখানে গড়ে তুলেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানা।

এসব কারখানায় প্যান্ট, থ্রি পিস, শার্ট, জ্যাকেটসহ আকর্ষণীয় ডিজাইনের নানা পোশাক তৈরি হচ্ছে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী সদস্য মো. মতিয়ার রহমান দুলু বলেন, দেশের বিভিন্ন গার্মেন্ট ও মিলগেট থেকে কেজি দরে কেনা ঝুট কাপড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হয় এখানে। আর এগুলো আমরা ন্যায্য মূল্যে কিনে দেশের বাইরে রফতানি করে থাকি।

তিনি বলেন, এসব কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তবে রেলওয়ের জমিতে ছোট ছোট গার্মেন্ট তৈরি করে কাজ করার কারণে সব সময় প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকে। এলাকাবাসী মনে করেন, যদি সরকারি সহায়তায় ব্যবসায়ীদের সৈয়দপুর ক্ষুদ্র পল্লি গার্মেন্ট কারখানা করে দেওয়া হতো তাহলে, এ ক্ষুদ্র কারখানাগুলো আরও সম্প্রসারিত হতো।

সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্ট শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আকতার বলেন, সরকারি উদ্যোগে সৈয়দপুরে ক্ষুদ্র গার্মেন্ট পল্লি স্থাপন করা হলে আরও বাড়বে ব্যবসায়ীর সংখ্যা। ব্যবসায়ীরা ঋণ সহায়তা পেলে বাড়তে পারে কারখানার সংখ্যা।