Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 3:58 pm

সোনাগাজীতে পানির সংকটে বোরো আবাদ ব্যাহত

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরাঞ্চলের খালগুলোয় পানি না থাকার কারণে বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা খালে পর্যাপ্ত পানি পেলেও বর্তমানে তা নেই। ফলে কৃষকেরা পানি ব্যবহার করে বোরো আবাদে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এ বিষয়ে তারা বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনটাই অভিযোগ করছেন স্থানীয় চরচান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষক রমজান আলি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার হেক্টর বোরো রয়েছে সোনাগাজী সদর, করা হচ্ছে। চরছান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের চরাঞ্চলে। এ তিনটি ইউনিয়নে সোনাগাজীর ভাঙ্গি খাল, বামনখালী খাল ও ঝালিয়ার ডাঙ্গি খাল এবং ইরিগেশন প্রকল্পের পানির লাইন থেকে আবাদি জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে খালে পানি পেয়ে কৃষক বোরো আবাদ শুরু করেন। অনেকেই জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে হঠাৎ খালগুলোয় পানি দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় পানি সংকটে আবাদকৃত বোরো ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, চলতি মৌসুমে নানা কারণে এসব এলাকায় ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত পানির লাইনগুলোও চালু করা যায়নি। দ্রুত খালে পানি দেয়া এবং ইরিগেশন প্রকল্পের পানির লাইন চালু করার জন্য বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরনা দিয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না কৃষক। এতে আবাদকৃত বোরো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। শিগগিরই জমিতে পানি দিতে না পারলে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান, খালগুলো খননের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়। এসব খালের পার্শ্ববর্তী যেসব জমিতে আমরা ধান চাষ করি সেক্ষেত্রে গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করা হয়নি। এমনকি পরে আমাদের এসব বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল। বর্তমানে খালগুলোয় পানি না থাকার একমাত্র কারণ সঠিক নিষ্কাশনের অভাব।

চরছান্দিয়া ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের কৃষক আবু সাইদ রুবেল জানান, বোরোর সঙ্গে এবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন তিনি। খালে পানি না পাওয়ায় ধান ও ভুট্টা ক্ষেতে প্রয়োজনমতো পানি দেয়া যাচ্ছে না। দ্রুত পানির ব্যবস্থা করা না গেলে ফসল বাঁচানো যাবে না।

উপজেলা পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন জানান, বেশ কয়েক দিন খালে পানির ব্যবস্থা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ায় কৃষকের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উম্মে রুমা ও চরছান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, খালে ১৫ দিন ধরে পানি নেই, বিষয়টি আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, তারা বিষয়টি ‘দেখছি, দেখছি’ বলে সময়ক্ষেপণ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কৃষকের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পানি সঞ্চালনের দায়িত্ব হলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা কেন হঠাৎ করে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, সে বিষয়ে আমরাও খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমার বলেন, ‘পানি সংকটের বিষয়টি আমরা জেনেছি। তবে ঠিক কী কারণে খালে পানি যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। শিগগিরই খাল পরিদর্শন করে পানির ব্যবস্থা করা হবে।’