সোনাতলার বারামখানায় কলসিতে ঘর পেতেছে পাখি

পারভীন লুনা, বগুড়া: পাখি আসছে, উড়ে যাচ্ছে। এক ডাল থেকে আরেক ডালে গিয়ে বসছে। আর কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়ফতেপুর গ্রামে সরকারিভাবে গড়ে তোলা বারামখানা। পথচারীদের জন্য বিশ্রামখানা হিসেবে গড়ে তোলা স্থানের নাম দেয়া হয়েছে বারামখানা। এ বারামখানাটি এক বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। শতাধিক নানা ফলদ ও বনজ প্রজাতির গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা হয়েছে। এসব গাছের ডালে কলসি বসানো হয়েছে। আর এ কলসিতে সংসার পেতেছে পাখিরা।

জানা গেছে, গড়ফতেপুর গ্রামসহ আরও তিনটি গ্রামের মানুষকে রক্ষায় স্বাধীনতার সময় মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়। বহিঃশত্রুর কবল থেকে যেন সহজে রক্ষা পাওয়া যায়, সেজন্য এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ কারণে অনেক আগে থেকেই এলাকাটি বেশ নীরব। যদিও কালের পরিবর্তনে সেই দেয়াল আর নেই, কিন্তু গাছগাছালি ঠিকই আছে। সেই গাছগাছালি ও ছায়াঘেরা এলাকায় পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বছর খানেক আগে নির্মাণ করা হয় চৌচালা বিশ্রামখানা ‘বারামখানা’।

স্থানীয় লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমানের সহযোগিতায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর আলমের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বারামখানা’। এর পাশে রয়েছে বিশাল মাঠ। মাঠে কৃষক ফসল ফলায়। মাঠের চারপাশ ফুল ও ফলের গাছে ভরে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবে নৈসর্গিক স্থান হিসেবে ‘বারামখানা’ গড়ে উঠেছে। বারামখানা প্রতিষ্ঠার পর চারদিকে থাকা গাছগুলোয় পাখির বাসা লাগানোর পরিকল্পনা করে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’। পাখির অবাধ বিচরণের জন্য আরও কিছু গাছ রোপণ করা হয়। পাখিদের নিরাপদে বসবাসের জন্য মাটির কলসি গাছে বেঁধে দেয়া হয়। সেই কলসির মধ্যে বেশ কয়েকটি পাখি খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে। কয়েক দিনের মধ্যে পাখিদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বারামখানা। এখন সেখানে চোখে পড়ে ‘মাটির কলসি’তে খড়কুটো মুখে নিয়ে চলাচল করা পাখির অবাধ বিচরণ; শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির।

প্রতিদিন এ অভয়ারণ্যে যুক্ত হচ্ছে নতুন পাখি। পাখিগুলো কলসিতেই বসবাস করছে। আবার কোনো পাখি গাছের ডালে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। পাখিগুলো যেন বারামখানার কলসিতে সংসার পেতেছে।

সোনাতলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলোয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পরিবেশ উন্নয়ন পরিবার’-এর সভাপতি ইমরান এইচ মণ্ডল বলেন, ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সুন্দর রাখতে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের এ উদ্যোগ। যেহেতু বারামখানা চত্বরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি স্থান এবং আগে থেকেই এখানে পাখিদের বিচরণ রয়েছে, তাই পাখির জন্য বৃহৎ অভয়াশ্রম তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

উপজেলার কামারপাড়ার তারা মিয়া জানান, আগে থেকে এখন ওই গ্রামে অনেক বেশি পাখি আসে। আগে এত পাখি দেখা যেত না। পাখিগুলো সকাল-সন্ধ্যা কিচিরমিচির করে। অন্য সময় পাখিগুলো বিভিন্ন মাঠে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। এলাকার মানুষও পাখিগুলোর যতœ নেয়। ছোট-বড় কেউই পাখিকে আঘাত করে না।