## গত অর্থবছরের তুলনায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে
## বিদায়ী অর্থবছর গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৮৮ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে
## সেবার মান বৃদ্ধি আর ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরি হওয়ায় আমদানি বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ। করোনার মধ্যেও এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিলো। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বন্দরের প্রতি ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে এ বন্দর দিয়ে যেকোন বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। আর রাজস্ব আদায় গত পাঁচ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর এই শুল্ক স্টেশন প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন বেশি। আর রাজস্ব আদায় প্রায় ৭০৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪৮৮ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর আমদানি-রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা।
সোনামসজিদ শুল্ক স্টেশনের হিসাবমতে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর এই স্টেশনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭৩ কোটি ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০৭ কোটি ৮০ লাখ ৬ হাজার টাকা। বিদায়ী অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি। আর গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বেশি। আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
অপরদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর ৪৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায়ে ২১৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯ হাজার টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৪১০ কোটি ৬২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায়ে হয়েছে ৩০১ কোটি ৪১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৫৬৪ কোটি ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩০০ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ৩৬৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫১৫ কোটি ২২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
সোনামসজিদ শুল্ক স্টেশন সূত্রমতে, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর, ভুট্টা, ভুসি, চিড়া, কিছু মেশিনারিজ, পোলট্রি ফিড, ফ্লাইঅ্যাশ ও পেঁয়াজ আমদানি হয়। মৌসুমি ফল যেমন কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফল আমদানি হয়। নেট মশারি, পাটের ব্যাগ, পাটের দড়ি, রাইস ব্রান অয়েল ও কিছু গার্মেন্ট পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। তবে এ বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ৬০ শতাংশই পাথর। ফলে পাথর থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

অপরদিকে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি মৌসুমি ফল আমদানি হয় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। তবে এ বছর সোনামসজিদ দিয়ে মৌসুমি ফলের আমদানি বেড়েছে। ফল থেকেও রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দর দিয়ে কাঙ্খিত মাত্রায় আমদানি-রপ্তানি হয়নি। এসব সমস্যার সমাধান হওয়ায় এবং ব্যবসায়ীদের আস্থা তৈরি হওয়ায় আমদানি-রপ্তানির পথ সুগম হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে।
শুল্ক স্টেশনের হিসাবমতে, বিদায়ী অর্থবছর এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এ বন্দর দিয়ে পাথর, ভুট্টা, চাল, পেঁয়াজ, গম, তাজা ফল, ব্যাপসীড এক্সাট্রাকশন, রাইস ব্রান, সয়াবিন ওয়েল ও চায়না ক্লে বেশি আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছর ১০টি পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিলো প্রায় ১২ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। আর বিদায়ী অর্থবছর আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৭৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছর প্রায় ১৮ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে।
হিসাবে আরো দেখা যায়, বিদায়ী বছর এই বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন বেশি। এছাড়া ভুট্টা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন, চাল প্রায় এক লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন, গম এক লাখ ২৩ লাখ মেট্রিক টন, তাজা ফল ৭০ হাজার মেট্রিক টন, ব্যাপসীড এক্সট্রাকশন ৪৫ হাজার মেট্রিক টন, ডি ওয়েল রাইস ব্রান ৫১ হাজার মেট্রিক টন, সয়াবিন ওয়েল এক্সট্রাকশন ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি আমদানি বেশি। এছাড়া পেঁয়াজ ও চায়না ক্লে আমদানি গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে, বিদায়ী অর্থবছর রপ্তানি কিছুটা কমেছে। বিশেষ করোনার কারণে ভারতীয় অংশে লকডাউন থাকায় পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়ে। বিদায়ী অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ মেট্রিক টন, যেখান ২০১৯-২০ অর্থবছর রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শুল্ক স্টেশনে সেবার মান আগের চেয়ে বেড়েছে। জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতে প্রায় সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে এ বন্দরের প্রতি তাদের আস্থা তৈরি হয়েছে। যাতে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজস্ব বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সেবার মান বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা। প্রতিদিন যেসব বিল অব এন্ট্রি পড়ে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ দৈনিক পণ্য খালাস হয়। কোনো পণ্য খালাস বিলম্ব হলে প্রয়োজন বোধে ছুটির দিন শুক্রবার খোলা রেখেও পণ্য খালাস করা হয়। রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের পেছনে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা আর টিম সোনামসজিদ এর ভূমিকা ছিল অপরিসীম।’
শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট এ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি ও শুল্কফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তবে সুযোগসন্ধানী একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে সব সময় তৎপর। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়। বিদায়ী অর্থবছর অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফাঁকি রোধে কাস্টমস তৎপরতা বাড়ানোর ফলে তা প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে। সেবার মান বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে এই কমিশনারেট।
###