Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 2:11 pm

সোনার দাম বাড়ায় রিজার্ভে বাড়তি অর্জন ৯ কোটি ডলার

শেখ শাফায়াত হোসেন: বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে গচ্ছিত সোনার মূল্যবৃদ্ধিজনিত অর্জন হয়েছে ৯ কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে সোনার অংশ বেড়েছে, যদিও ওজনের দিক দিয়ে আগের মতোই রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুলাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতি দাঁড়ায় তিন হাজার ২১২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে গচ্ছিত সোনার আর্থিক পরিমাণ বা মূল্য দেখানো হয়েছে ৬৪ কোটি চার লাখ ডলার। অথচ ২০১৮ সালের জুলাই শেষে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তিন হাজার ২১০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। ওই সময় রিজার্ভে গচ্ছিত সোনার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৫৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে বর্তমানে যে পরিমাণ সোনা রয়েছে, তার ওজন চার লাখ ৪৯ হাজার ১৪৩ আউন্স বা ১৩ হাজার ৯৭০ কেজি। এক বছর আগেও রিজার্ভে মজুত করা সোনার পরিমাণ একই ছিল। তবে গত জুনে রিজার্ভের সোনার মূল্য পুনর্মূল্যায়ন করে দেখানো হয় ৬৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার। পরের মাস জুলাইয়ে সেই মূল্য আরও বাড়িয়ে ৬৪ কোটি চার লাখ ডলার করা হয়। ফলে এক বছরের ব্যবধানে সোনার মূল্য বাড়তে দেখা যায় ৯ কোটি আট লাখ ডলার।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর বাড়তে দেখা গেছে। দেশেও চলতি আগস্ট মাসে চারবার সোনার দাম বেড়েছে। গত মঙ্গলবার ভালো মানের সোনার দাম বেড়ে ভরিপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৮ টাকা। এটি ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ দাম। ওই সময় সোনার ভরি ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছিল।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত জুলাই শেষে বিদেশি মুদ্রার মজুত করা তিন হাজার ২১২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের সমপরিমাণ সম্পদের মধ্যে বিনিময়যোগ্য বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৫০ কোটি ১২ লাখ ডলার। এর মধ্যে সিকিউরিটিজের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এসব সিকিউরিটিজের ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সদর দফতর বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত।
এছাড়া বাকি এক হাজার ৫০৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মধ্যে অন্যান্য কয়েকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিআইএস ও আইএমএফের কাছে গচ্ছিত রাখা আছে ৪৬০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এছাড়া দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থিত কিছু বিদেশি ব্যাংকেও রিজার্ভের অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। এছাড়া আইএমএফ রিজার্ভের অবস্থান ১৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার এবং এসডিআর ১২৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
তবে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি থাকায় ডলারের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার সরবরাহ বজায় রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেও ভালো মুনাফা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোনা ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত অর্জন ও স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সরবরাহের মধ্য দিয়ে বিদায়ী অর্থবছরে পাঁচগুণেরও বেশি মুনাফা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৭৯২ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়। মুনাফা বাড়ার খুশিতে পর্ষদ বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাড়ে চার মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসাহ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে নানাবিধ সংকট কাটিয়ে রিজার্ভ এখন আবার স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী একটি অবস্থানে রয়েছে।
তবে গত ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। সেই রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, রিজার্ভ এক বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৭ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় এবং ২০১৭ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করে। এরপর অবশ্য আর কখনও রিজার্ভ এমন উচ্চতা পায়নি।