Print Date & Time : 3 September 2025 Wednesday 5:19 am

সোনা-জরি পণ্যের চড়া দামে ব্যবসায় ভাটা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: ‘আনায় আনায় যোল আনা, ষোল আনায় এক ভরি।’ আর এই এক ভরি সোনার টাকা জোগাতে ঘাম ছুটছে বিয়ের লাড্ডু ফোটা যুবকদের। হাজার বছরের ঐতিহ্য অনুযায়ী বিয়ের আলোচনায় সবার আগে আসে সোনা দেয়া-নেয়ার কথা। অপরদিকে দফায় দফায় সোনার দাম বাড়ার ফলে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাইলেও বসা হচ্ছে না সিঙ্গেলদের। শুধু সোনা নয়, বিয়েতে ব্যবহƒত জরি পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সবমিলিয়ে সিঙ্গেলদের মাথায় হাত!

শনিবার  রাজশাহীর সোনাদিঘী স্বর্ণপট্টি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সোনার দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নেই কানের দুল, হাতের বালা কিংবা গলার মালার অর্ডার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খরা লেগেছে সোনার বাজারে। বাড়তি দামের কারণে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মাসে এক ভরিও সোনা বিক্রি করতে পারেননি। সেই সঙ্গে দাম কমার সম্ভাবনাও শূন্যের কোঠায় রয়েছে বলে আভাস দেন তারা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) প্রতি মাসেই সোনা ও রুপার দাম নির্ধারণ করে। গত মাসের ২৩ মার্চ নতুন করে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছিল বাজুস। সর্বশেষ চলতি মাসের ২ এপ্রিল নতুন দাম জানায় সংস্থাটি। আর এ নির্ধারিত দামেই সারাদেশের ব্যবসায়ীরা সোনা বেচাকেনা করে থাকেন।

বাজুসের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি মো. আসলাম উদ্দিন সরকার শেয়ার বিজকে জানান, ৪৮ বছরের ব্যবসা জীবনে এমন দিন কখনও দেখতে হয়নি তার। এ মাসের ৮ দিনে এক আনা সোনা বিক্রি হয়নি। তার বক্তব্য অনুযায়ী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের কারণে সোনা কেন বিলাসিতা। চাল-ডালের মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ফলে সোনা বাজারে পায়ের ধুলি দিতেও আসছে না কেউ। ছয় মাসে কমেছে বিয়ের সংখ্যা।

বাজুসের তথ্য তুলে ধরে এ প্রবীণ ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯ হাজার ১৪৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেট ৯৪ হাজার ৬৫৩, ১৮ ক্যারেট ৮১ হাজার ১২৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরির দাম ৬৭ হাজার ৫৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ২৩ মার্চের নির্ধারিত স্বর্ণের দামের সঙ্গে তুলনা করলে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫১৬ টাকা। রাজশাহীর ৪৬২ জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এ দামে সোনা বিক্রি করছেন। আমরা ধারণা করছি বিয়ে-শাদির সংখ্যা কমার কারণেই সোনা বিক্রি কমে গেছে। ঈদের পর যদি একটু ব্যবসা হয় তাহলে বাঁচতে পারব।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়েতে ব্যবহƒত জরি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। করোনাকাল থেকে বাড়তে শুরু করে দাম। দাম বাড়তে বাড়তে ১৭০ থেকে ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা চীন থেকে জরি পণ্য আমদানি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ গাঢ় হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে প্রভাব পড়েছে। রাজধানীতে দামের তুলনায় বিভাগীয় শহরে পণ্যই পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকার জরি ব্যবসায়ী হাসিব জরি হাউসের মালিক হাসিব মোল্লা শেয়ার বিজকে জানান, বিয়ের শেরওয়ানি. পাগড়ি, ওড়না, নাগরা জুতা, মালা, রাখি, খোঁপা, গাজরাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। বছর খানেক আগে শেরওয়ানি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় পাওয়া যেত, তা বর্তমানে সর্বনি¤œ ৫ থেকে ৮ হাজারে ঠেকেছে। ৫০০ টাকার পাগড়ি ১২০০ টাকা, ৬০০ টাকার ওড়না ১৪০০ টাকা, ২০ টাকার রাখি ১০০ টাকা, ১০০ টাকার খোঁপা ২৫০ টাকা, ১০০ টাকার নাগরা ৪০০ টাকা, ১০০ টাকার মালা ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় মাল পাচ্ছি না। জরি পণ্য কিছুটা দেশে তৈরি হয় আবার চীন থেকে আমদানি করতে হয়। বেশি দামের কারণে নাকি ঢাকার ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না ফলে আমাদের কাছে দাম বেশি পড়ছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী মাল ঘরে রেখে দিচ্ছেন না। সবমিলিয়ে অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ার কারণে এসব জিনিসের দামও বেড়েছে। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে যারা নতুন বিয়ে করতে চাচ্ছেন তারা।’