Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 1:22 am

সৌদি আরব জুলাইয়ে তেল উৎপাদন কমাবে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সৌদি আরব আগামী মাসে তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর: রয়টার্স।

সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাইয়ে প্রতিদিন আরও ১০ লাখ ব্যারেল করে তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। সরবরাহ কমিয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মে মাসে দেশটির দিনে তেল উৎপাদন ছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ব্যারেল। এ ঘটনাকে তেল উৎপাদন হ্রাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সৌদি আরবের নেতৃত্বে ১৩ দেশীয় জোট অরগানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) এবং এর ১০ মিত্রদেশের মধ্যে বৈঠকের পর এমন ঘোষণা দেয়া হয়। মিত্রদেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে রাশিয়া। ওপেক ও ১০ মিত্রদেশকে ডাকা হয় ওপেক প্লাস নামে।

সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কখনও জনগনকে বুঝতে দিতে চাই না, সামনে কী ঘটতে চলেছে… বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য এর দরকার রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদন কমানোর এ সিদ্ধান্ত জুলাইয়ের জন্য নেয়া হয়েছে। এর মেয়াদ বাড়তে পারে।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেক প্লাস দেশগুলোর প্রতিনিধিরা কয়েক ঘণ্টার আলোচনায় অংশ নেয়ার পর ‘স্বেচ্ছায়’ উৎপাদন কমানোর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের ঘরে নেমে আসায় দিনে এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে চায় দেশগুলো। এ আলোচনার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র বলছে, প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল পরিমাণ উৎপাদন কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে তেল উৎপাদনকারীরা জোগান কমিয়ে দাম বাড়াতে চায়।

বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ৬০ শতাংশ ওপেক প্লাস দেশগুলোয় উৎপাদিত হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেলের দরপতন এবং অস্থির বাজার সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গত এপ্রিলে ওপেক প্লাসের বেশ কয়েকটি সদস্যদেশ স্বেচ্ছায় দিনে ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। হঠাৎ নেয়া এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তেলের দরপতন খানিকটা কমানো গেলেও এটি বেশি দিন টেকসই হয়নি। ওপেক কয়েক বছর ধরেই দফায় দফায় তেলের উৎপাদন হ্রাস করেছে। এর আগে শেষবার গত এপ্রিলে বিস্ময়করভাবে দিনে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ব্যারেল বাধ্যতামূলক এবং ১৬ লাখ ব্যারেল তেল স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো। অর্থাৎ ২০ লাখ ব্যারেলের পাশাপাশি সহযোগী দেশগুলো চাইলে দিনে আরও ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে পারে।

এপ্রিলে উৎপাদন কমানোর ঘোষণার পরও তেলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারে নেমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর এবারই প্রথম ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এতটা কমেছে।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, বর্তমানে উৎপাদন কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পর ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

এই উৎপাদন হ্রাসের বিষয়টি অনুমোদিত হওয়ার পর সব মিলিয়ে দৈনিক মোট উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন বা ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে, যা বৈশ্বিক চাহিদার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়বে এবং তাতে তেলের দামও বাড়বে।