সৌদি ও আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি স্থগিতের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আগাম অনুমোদন দিয়েছিলেন সেগুলোও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা নিশ্চিত হওয়া যে, আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা। এ বিষয়টিই এখন আমরা যাচাই-বাছাই করছি। খবর: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

জানা যায়, বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই দেশের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের কাছে প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন্স থেকে শুরু করে আমিরাতের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির মতো সিদ্ধান্তগুলোও রয়েছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, যে কোনো নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলেই পূর্বসূরির অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রির মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়। বাইডেন প্রশাসনও ব্যতিক্রম নয়। তবে বিরোধিতা সত্ত্বেও অনেক বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পর্যালোচনা বা পুনর্মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন। এখন হোয়াইট হাউসে অভিষেকের এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিল তার প্রশাসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বদলে দিতে শুরু করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

ইসরাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং ইরানকে চাপে রাখতে সৌদি আরব ও আমিরাতকে কাছে টানার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। তড়িঘড়ি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনও দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খায় রিয়াদ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিনন্দন বার্তায় ভাসছিলেন জো বাইডেন, তখন দৃশ্যত মুখে কুলুপ এঁটেছিল সৌদি আরব। পরে সমালোচনার মুখে তাকে অভিনন্দন জানালেও এজন্য ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় নেয় মধ্যপ্রাচ্যের এ রাজতান্ত্রিক দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। মূলত ট্রাম্প-কুশনারের প্রচেষ্টাতেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হয় মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বলয়ের একাধিক দেশ।

নিজের মেয়াদের শেষ সময়ে অন্তত চারটি আরব দেশের কাছ থেকে ইসরাইলের স্বীকৃতি নেয়াসহ দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ট্রাম্প। সৌদি আরবও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সাংবাদিক খাসোগি হত্যকাণ্ডের জবাবদিহি থেকেও যুবরাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি যুবরাজের জবাবদিহির দাবি তুলেছিলেন বাইডেন। নির্বাচনী প্রচারে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছেন ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের। এমন বাস্তবতায় ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মাথায় সৌদি-আমিরাতের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বাইডেন প্রশাসন।