স্কুলের দেয়াল ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ

প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে এক বিচারকের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রাধানগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখল করেন বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরনিম আকতার পাপড়ি। এ ঘটনায় গত রোববার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলী আটোয়ারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যদিও ওই বিচারকের দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার পর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার লোকজন নিয়ে এসে বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরনিম আকতার পাপড়ি ও তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও একটি শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ভেঙে দিয়ে জমি দখলে নেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির দক্ষিণ অংশ ফাঁকা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-বেঞ্চসহ সরকারি বিভিন্ন মালামাল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ১০৮ শতক জমি নিয়ে রাধানগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা সাবেক জেলা প্রশাসক তসলিম উদ্দিন প্রধান ও তার ভাই মাহাবুব রহমান বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জমি দান করেন। বিদ্যালয়ে দান করা জমির মধ্যে ২৮ শতক জমি রেজিস্ট্রি না দিয়ে মৌখিকভাবে দান তারা।

২০১৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তছলিম উদ্দিন প্রধানের কন্যা বর্তমানে বগুড়ার জেলা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের জজ শরনিম আকতার পাপড়ি পিতার কাছে বিদ্যালয়কে দান করা জমিটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। পরে ওই জমি নিজের মালিকানা দাবি করে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জমি ফেরত চান ওই বিচারক। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৫ মার্চ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিনামা সই হয়। এর মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ওই জমির পরিবর্তে অন্য জায়গায় ২০.৫ শতক জমি দেন। তিনি নিজে ৩.৫ শতক জমি দানও করেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু মাত্র ৪ শতক জমি স্কুলের দক্ষিণ সীমানা দেয়ালঘেঁষা থেকে যায় স্কুলের কাছে। ওই জমি দখলে নিতে বগুড়ার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি তারিখ ছাড়া পাঠানো হয়। পরে ওই ৪ শতক জমি গত শুক্রবার বিচারক শরনিম আকতার নিজে উপস্থিত হয়ে দখলে নেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি তারা।

অবৈধ পন্থায় প্রাচীরসহ শ্রেণিকক্ষ ভেঙে জমি দখলের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আয়ুব আলী রোববার আটোয়ারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর যখন দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়, তখন বালিকা বিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করে উঁচু করে নির্মাণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শরনিম আকতার নামে এক বিচারক বিদ্যালয়ের জমিটি দখলে নিতে সীমানা প্রাচীর ও একটি কক্ষের দেয়াল ভেঙেছেন। যেটা আমি এলাকাবাসী হিসেবে মেনে নিতে পারছি না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আইনের মানুষ হয়ে কীভাবে তিনি বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে জমি নেন?

তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি ও নোটিস করার পর প্রাচীরসহ শ্রেণিকক্ষের চার ফুট ভাঙা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরনিম আকতার পাপড়ি।