পণ্যের দাম না কমালেও উৎপাদনকারীরা এটি স্বীকার করবেন, প্রধান কাঁচামালের দাম কমলে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমবে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তারা দাবি করেন, প্রধান কাঁচামালের দাম কমলে তারাও উৎপাদিত পণ্যের দাম কমাতে পারবেন।
প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে যেসব শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহƒত কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়, সাধারণত সেসব পণ্যের দাম কমে। তাই ভোক্তাসাধারণ আশা করতেই পারেন, তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম কমায় রডের দাম কমবে। উৎপাদন খরচ কমলে উৎপাদনকারী পণ্যের দাম স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কমালে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদন খরচ বাড়লে তো তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কিংবা এককভাবে দাম বাড়িয়ে দেন। তাই আমরাও আশা করি, রডের দাম তারা সমন্বয় করবেন। এটি করা হলে আমাদের আবাসন খাত গতিশীল হবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরও ব্যবসা বাড়বে, তারা লাভবান হবেন।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘চাহিদা কমায় স্ক্র্যাপের দাম টনে ১৭ হাজার টাকা কমেছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, চাহিদা না থাকায় চলতি মাসের শুরুতে দাম কমতে শুরু করছে স্ক্র্যাপের।
আবাসন ও নির্মাণশিল্পের প্রধান উপকরণ রডের দাম কমায় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)।
বলা হয়ে থাকে, দুর্যোগ-দুঃসময়ও কিছু সম্ভাবনা নিয়ে আসে। কভিডকালে কিছু খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু খাতে সম্ভাবনা বেড়েছে। সে সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করে বৈধভাবে ব্যবসা করেই ভালো মুনাফা করেছেন অনেকে।
ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানিকারকদের খরচ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু কেউ ব্যাংক পেমেন্টের জন্য লোকসানে বিক্রি করছে, এমন কারণও দেখাবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পুরোনো জাহাজের দাম ক্রমেই কমছে, এটিও বিবেচনায় নিতে হবে। নির্মাণসামগ্রীর মূলবৃদ্ধির কারণে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। প্রায়ই লক্ষ করা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে না। রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় এবং ডলারের মূল্য স্থিতিশীল হওয়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে নির্মাণ খাতের এ পণ্যটির দাম কমানো সম্ভব। এর জন্য আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে স্থানীয় মূল্যের সমন্বয় করতে হবে। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এ উদ্যোগ নিতে পারে।
তবে বেসরকারি খাতের রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণ দেখাবে। ডলার সংকট, কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়া, গ্যাসের সংকটে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের বাড়তি দাম প্রভৃতির কারণে হয়তো রডের দাম কমানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু এটি তো ঠিক, কাঁচামাল ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে উৎপাদন ব্যয়ের ৬০-৬৫ শতাংশই খরচ হয় স্ক্র্যাপের পেছনে। তাই স্ক্র্যাপের দাম কমলে তার সুবিধা স্থানীয় বাজারে কিছুটা হলেও পড়ার কথা।
দেশের নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে কাঁচামালের দামের সঙ্গে রডের দাম সমন্বয় করা হবে বলে প্রত্যাশা।