ঢাকা চেম্বারের সেমিনারে বক্তারা

স্টার্টআপ বিজনেসের প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্বল অবকাঠামো ও অর্থায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমই স্টার্টআপদের সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার গতকাল ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আলম যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, সিএমএসএমইরাই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৩০ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এ খাতের সঙ্গে জড়িত। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমাদের স্টার্টআপের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২০০ এবং প্রতি বছর প্রায় ২০০ স্টার্টআপ এ খাতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সময়ে এ খাতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দক্ষ মানবসম্পদ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, দুর্বল সাপ্লাইচেইন অবকাঠমো, ইনোভেটিভ চিন্তা-চেতনা এবং আর্থিক সহায়তার অনিশ্চয়তার কারণে আমরা এ খাত থেকে কাক্সিক্ষত সাফল্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছি।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম বলেন, ১৭টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের থেকে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং এটুআই (ইন্সপায়ার টু ইনোভেশন) প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ ফান্ডের মাধ্যমে যেসব স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা কার্যক্রম পরিচালনায় নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার প্রতিটি জেলায় ‘শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে; এছাড়া হাই-টেক পার্কগুলোয় স্টার্টআপ এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিনা মূল্যে অফিস ও জায়গা বরাদ্দের পাশাপশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব আরও বলেন, দেশের ফিনটেক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ‘বিনিময়’ নামে পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত করেছে, যেটি এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং বৃদ্ধি পাবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। তিনি জানান, বর্তমান সরকার ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের খসড়া চূড়ান্তকরণের পথে রয়েছে, যেটি বাস্তবায়ন হলে বহির্বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের অবস্থানের আরও উন্নয়ন ঘটবে। এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সরকার ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যকার একটি সুদৃঢ় সমন্বয়ের ওপর জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আলম বলেন, নতুন শিল্পনীতিতে সিএমএসএমই খাতের সংজ্ঞায়ন সুনির্দিষ্টকরণ করা হয়েছে, যেটি এ খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতোমধ্যে ‘এসএমই বোর্ড’ গঠন করেছে, যদিও এ খাতের উদ্যোক্তাদের সেখানে প্রতিনিধিত্ব তেমন আশানুরূপ নয়, এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বেশি হারে উক্ত বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের সফল হওয়ার জন্য তিনি ইনোভেশন কার্যক্রমের ওপর বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার জোরারোপ করেন এবং এদের উন্নয়নে বিদ্যমান নীতিমালা ও ভ্যালু এডিশন কার্যক্রম আরও সহজীকরণ, সেই সঙ্গে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় একটি ‘এসএমই বন্ড’ প্রবর্তনেরও প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ জানান, ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪১২ মিলিয়ন এবং এর ফলে দেশে প্রায় ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের অনুপস্থিতি, আর্থিক সহায়তার ঘাটতি, দক্ষ মানবসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। স্টার্টআপ খাতের উদ্যোক্তাদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ‘স্টার্টআপ পলিসি’ প্রণয়ন শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, সরকারি সেবা ও সহযোগিতা প্রাপ্তি আরও দ্রুততরকরণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

চাল-ডালের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর তানভীর রশিদ, ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা আমব্রিন রেজা এবং বাংলাদেশ এঞ্জেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নির্ঝর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন। আলোচকরা স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি সহজীকরণ, প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও যুগোপযোগীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, ইনোভেশন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি ‘স্টার্টআপ পলিসি’ প্রণয়নের আহ্বান জানান।